সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই পাঁচ সিটির ভোট, পরীক্ষায় ইসি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ২ এপ্রিল, ২০২৩

আগমী দুই মাসের মধ্যে (মে-জুন) গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ  সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১০ সেপ্টেম্বর, খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ১০ অক্টোবর, সিলেটে ৬ নভেম্বর ও বরিশালে ১৩ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হবে।  সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ রয়েছে। একারণে আগামী দুই মাসের মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ করে সংসদ নির্বাচনমুখী হতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৫ সিটির  নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে চায় ইসি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ সিটির নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর পড়বে। এ কারণে সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির জন্য অগ্নি পরীক্ষা হচ্ছে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এসব নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অংশগ্রহণমূলক না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে যে শঙ্কা রয়েছে, তা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।

 

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন ধাপে পাঁচটি সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। নির্বাচনি এলাকাগুলোয় ইতোমধ্যে সরকারদলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। আর বিএনপির পক্ষ থেকে  বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলছেন নেতারা।

 

এবিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে এর প্রভাব  পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর। আর সিটি করপোরেশন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা ইসির জন্য সহজ হবে। এসব বিবেচনায় ওই নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসির জন্য একটি পরীক্ষা। বিএনপিসহ বড় দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা আরও বেড়ে যাবে। এর প্রভাব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে। ভোটার উপস্থিতি যাতে বাড়ে, ইসিকে সব ধরণের  ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণসহ সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনাররাও একাধিকবার নির্বাচনি এলাকাগুলোয় সফর করবেন। তারা অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন। তাদের সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে আশ্বস্ত করবেন। এর মধ্যে ইসি নিজেদের নিরপেক্ষতার জানান দেবেন, যা আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

 

ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসেন মূলত প্রার্থীরা। এ কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশি ভোট পড়ে।

 

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে দলটি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৮.৭৪ শতাংশ। উপজেলা ওপৌরসভাগুলোয়ও প্রার্থী ও ভোটার সংখ্যা কমছে।

 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু  হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আশার সৃষ্টি হবে। আর যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হয়, সেই রেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর পড়বে। নির্বাচন কমিশন ও ভোটের ওপর মানুষের আস্থা আরও তলানিতে নামবে।

 

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান  বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যত নির্বাচন করেছি, সবকটিই আমরা সততার সঙ্গে আন্তরিকভাবে করেছি।  সিটি করপোশনসহ আগামী দ্বাদশ সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করব ইনশাআল্লাহ।

 

সাংবিধানিকভাবে আমাদের দায়িত্ব যতটুকু, এর শতভাগ আমরা পালন করব জানিয়ে  তিনি বলেন, সব দলের প্রতি আন্তরিক আহ্বান অব্যাহত থাকবে-ভোটে অংশ নিন। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই-অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন করা।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। ইসি  এখনো বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসির বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের বড় সুযোগ। আশা করি  তারা সেই সুযোগ গ্রহণ করবেন।

 

একুশে সংবাদ.কম/আ.জ.প্র/জাহাঙ্গীর

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর