সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বিনা বেতনে ত্রিশ বছর পাঠশালা চালায় রশিদ মাস্টার

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ৬ নভেম্বর, ২০২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে শিক্ষা প্রদান করছেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান আব্দুর রশিদ মাষ্টার। গরিব পরিবারে জন্ম হওয়ায় এইচএসসি পাস করেই থেমেছিল রশিদ মাষ্টারের শিক্ষা জীবন।

 

আর এই কারনে তার মাথায় ঢোকে ঝরে পড়া ও অসহায় শিশু-বৃদ্ধদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর। দুটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বেশিদিন থাকতে পারেননি। অবশেষে নিজের বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে শুরু করেন পাঠদান। পরবর্তীতে দুটি টিনের ঘর তৈরি করেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে রশিদ মাস্টারের পাঠশালা।

 

আবদুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর দাড়িপাড়ার ইদ্রিশ আলীর ছেলে। তার পাঠশালায় এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার শিশু-বৃদ্ধ জ্ঞান অর্জন করেছেন। তারা এখন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রশিদ মনাকষা হুমায়ন রেজা স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বাবা এবং ভাই অসুস্থ থাকায় বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। চার বছর বিরতি দিয়ে ভর্তি হন আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজে। ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাসের পর শুরু হয় তার শিক্ষকতা জীবন। এর পর তিনি দুইটি প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করলে স্থানীয় ষড়যন্ত্রের শিকারে সফল হতে না পারায় ১৯৯১ সালে নিজ বাড়ির পেছনে বাঁশ বাগানে  খোলা আকাশের নিচে  শুরু করেন শিক্ষকতা।

 

প্রথমে ঝরে পড়া শিশুদের পড়ানো হত। এরপর প্রাইভেটের মতো করে অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। বয়স্করাও তার কাছ থেকে শিক্ষা নেন। বর্তমানে তাঁর পাঠশালায় দেড়শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এই শিক্ষকতার পাশাপাশি ওষুধের দোকানও করেন আবদুর রশিদ মাস্টার। তিনি জানান, প্রথমে বাড়ির পেছনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এখন বাড়ির বাইরে টিন দিয়ে দুটি ঘর করে পড়ানো হচ্ছে। কখনো কারও থেকে সহযোগীতা/টাকা নেইনি।

 

দোকানে ওষুধ বিক্রির আয়ে সংসার চলে। স্থানীয় এক কেজি স্কুলের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীর সাথে দেখা হলে সে জানায়, ‘ছোট থেকেই রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় পড়ছি। আমরা একসঙ্গে ২০-২৫ জন পড়তে আসি। এখানে বাংলা, ইংরেজি ও অংক পড়ানো হয়। সেখানে কোনো টাকা পয়সা লাগে না। পড়তেও ভালো লাগে। সাহাপাড়া বাজারের ফলের দোকানদার সৈয়ব আলী বলেন, ‘আমার পরিবারে কেউ শিক্ষিত ছিল না।

 

কেউ আমাকে পড়াশোনার জন্য বলেনি। নিজে স্বাক্ষরও করতে পারতাম না। দোকান দেওয়ার পর হিসাবের জন্য লোক রাখতে হতো। পরে রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় গিয়ে রাতে পড়েছি। বেতন দিয়ে এখন আর লোক রাখতে হয় না। 

 

আব্দুর রশিদ মাষ্টারকে সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন কিনা বা আশা করেন কিনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার আট ছেলে বিভিন্ন পেশায় জড়িত আছে। আমি পড়িয়েই আনন্দ পাই। তবে কিছুদিন আগে একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমডির সহযোগীতায় পাঠদানের জন্য দুইটি ঘর তৈরি করেছেন কিন্তু সেগুলো খুব বেশি সহনীয় পর্যায়ে নেই। বৃষ্টি হলে অনেক সময় ভিতরে পানি ঢুকে পড়ে তাই এই স্কুল ঘরের মেরামত করা দরকার।

 

তিনি বলেন, সাহাপাড়া বাজারে আমার ছোট একটি ঔষুধের দোকান আছে এই বাজারে সরকার যদি আমাকে স্থায়ী একটি পাঠদানের ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতেন তবে আমার এই মহান সমাজসেবা কাজ আমি চালিয়ে যেতে পারতাম। 

 

এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় সাংসদ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগীতা কামনা করেন।

 

একুশে সংবাদ/আ.ও.প্রতি/পলাশ

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর