সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

গ্রাম সালিশী ব্যবস্থার অবক্ষয়!

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ৫ এপ্রিল, ২০২১

অদিম যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সালিশ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সমাজের অন্যায়-অবিচার দূর করতে সরকার ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক বিচার ব্যবস্থা মানুষকে অনেক শান্তি স্বস্থি ও নিরাপদ করেছে। 

গাঁও গেরামের বিচার সালিশ পঞ্চায়েত মুরব্বী মাতবর পাঁচগাঁও সাতগাঁও বিশগাঁও পরগনা পাড়া আমানত খেয়ানত মুচলেকা ইত্যাদি শব্দের সাথে আমাদের দেশের বিশেষ করে গ্রামবাংলার সকলেই কমবেশী পরিচিত। গ্রাম্য সালিশী বিচার ব্যবস্থা আমাদের পূর্ব পুরুষের আমলেও ছিল বর্তমান আমলেও বহাল আছে, তবে এর মডিফাই হয়েছে বিভিন্নভাবে।স্বেচ্ছাসেবামূলক এসব কাজে নিজের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করতেন এবং এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে সমাজহিতৈষী কিছু সালিশ ব্যক্তিদের জন্যে। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।কিন্তু বর্তমান গ্রাম সালিশ ব্যবস্থার নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখন সালিশ বৈঠকে বসার আগে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি কোন না কোনভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। ন্যায় নীতিকে অবজ্ঞা করে পক্ষপাতদুষ্টে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এতে ব্যক্তি সাময়িক উপকৃত হলেও বিচারের বাণি যেন নিভৃতে কাঁদে। মানুষ সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই তাদের জন্য যেমন আইন আদালতের দরজা খোলা রয়েছে ঠিক সেভাবে সালিশ বিচার ব্যবস্থাও পাশে রয়েছে। সালিশি পদ্ধতির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। সালিশ পদ্ধতি যুগে যুগে বাঁচিয়ে দিয়েছে বহু মজলুম মানুষকে। রুখে দিয়েছে হিংসা বিদ্বেষ সংঘাত ও অরাজকতাকে। ইনসাফ ভিত্তিক বিচারের সেই ঐতিহ্যকে আমাদের লালন করতে হবে।

বর্তমানে সালিশ বিচারে একটি মহল পক্ষপাতিত্ব করে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ি বিচার কার্যক্রম চালিয়ে সালিশী পদ্ধতির ক্ষতি করে চলছে।তারা একটি প্রকৃত ঘটনাকে বিকৃত করে মনগড়া বানোয়াটভাবে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে ফায়দা হাসিলের জন্য নৈতিক অবক্ষিত সালিশী মাতাব্বর রা। তা কোন সমাজেই কাম্য হতে পারে না। একটি মহল বিবেক বিবেচনা বিবর্জিত হয়ে অত্যান্ত নির্লজ্জভাবে অতীতের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ঝেড়ে বিষোদগার করছেন। অপ্রাসংঙ্গিক ঘটনার সাথে ঘটনার রেশ টেনে দুধের তৃপ্তি পানিতে মেঠানোর মত শান্তনা খোঁজে বেড়াচ্ছেন।সালিশ বিচার করতে গিয়ে এক শ্রেনীর কাছ থেকে টাকা বা উপকৌটন নিয়ে এক তরফা বিচার করাই তাদের কাজ হয়ে দারিয়েছে। এই যারা এসব করে বেড়াচ্ছেন তারা প্রকৃত পক্ষে অপরাধীদেরকেই আস্কারা দিয়ে ভালমন্দের বিচারে জেনে বুঝেই মন্দকেই বেছে নিয়েছেন তা এই সমাজের সচেতন মহলের বুঝতে বাকী নাই।তাই সালিশী ব্যবস্থার উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে গ্রামের লোকজন।

এইত,কিছুদিন আগে আমার গ্রামের একটি ঘঠনা বলি,আমার গ্রামের এক দুস্থ মহিলাকে এলাকার একজন কোন কারন ছাড়া তার উপর হাত তুললে মহিলাটি থানায় মামলা করতে যায়।কিন্তু এলাকার সালিশী মাতাব্বরদের বাধায় মামলা করতে পারে নি।পরে বলা হল সালিশী বিচারের মাধ্যমে তার সমাধান হবে।কিন্তু তার পর ঐ সালিশী মাতাব্বর রা তাকেই বিচারে দোষী সাব্যস্ত করে মাফ চাইয়েছে।কারন কি জানেন? কারন হল ঐ মাতাব্বর রা তার কাছে ৭ হাজার টাকা চেয়েছিল।দিতে পারে নাই।তাই বিচারে দোষী সে।এখানে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে সালিশী ব্যবস্থার অবক্ষয়!

সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা, ভূলবুঝাবুঝি ব্যক্তির দ্বন্দ্ব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির বিরোধ হতেই পারে। আর এসব বিরোধীয় বিষয়গুলো সর্বক্ষেত্রে সরকারী কোর্ট কাচারী পর্যন্ত গড়াতে হয় না আমাদের সমাজের কিছু হিতৈশী ব্যক্তিবর্গের কারণে। এই হিতৈষী গুনিজন তাদের স্বার্থকে অনেকাংশে জলাঞ্জলী দিয় জনমুখী ও কল্যাণকর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে এসব বিষয় নিষ্পত্তিতে বেশিরভাগ সফলতার কারণেই সমাজ একটি বিধিবদ্ধ নিয়মের গন্ডির ভিতর আর্বততি হয়। এই ক্ষেত্রে ফরিয়াদী বনাম বিবাদীর অধিকার সুরক্ষায় সমাজ হিতৈষী সালিশী গণকে অত্যাধীক সচেতন থাকতে হয়। কিন্তু অপরাধের বিচার করার পরিবর্তে যদি অপরাধিকে টাকা বা অন্যান্য কারনে সালিশী ব্যক্তি গণ সাপোর্ট করে তাহলে সে অপরাধের কারনে পুরো সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।তাই আমাদের উচিৎ এসব নৈতিক অবক্ষয় সালিশী ব্যাক্তিদের কঠিনহস্তে দমন করে সালিশী ব্যবস্থাকে কলঙ্কমুক্ত করা।সালিশী ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা।


একুশে সংবাদ/হু/আ

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর