সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

আসুন জেনে নেই ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করতে অভিনব উদ্যোগ

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ২৬ জুলাই, ২০২১

ডায়াবেটিস আজ ও বিশ্বব্যাপী অনেক বড় একটি সমস্যা ৷ রোগীদের সাধারণত সারা জীবন ধরে ঔষুধ ও ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের উপর নির্ভর করে বেচে থাকতে হয় ৷ কিন্তু প্রথম পর্যায়ে যদি ওজন  কমানো যায় ও কিছু নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলেই এই রোগ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব ৷

জার্মানিতে প্রায় ৬০ লক্ষ ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন৷ প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক মানুষ সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ৷ নাটকীয় এই পরিস্থিতির মাঝে এক গবেষণা অনুযায়ী, শুধু ওজন কমিয়ে ডায়াবেটিসের মোকাবিলা করা সম্ভব ৷ পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. মাটিয়াস রিডেল বলেন, ‘‘আমার কাছে এটা একটা মাইলফলক৷ এটা স্পষ্ট, যে  ডায়াবেটিস নিরাময় করা সম্ভব ৷ আগের মতো এই রোগকে আর নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে হবে না৷''

ইংল্যান্ডের এই গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, যে রোগ দেখা দেওয়ার পর প্রথম ৬ মাসের মধ্যে শুধু ওজন কমিয়ে সেটি নিরাময় করা সম্ভব৷ তাতে কোনো ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না ৷

এক পরীক্ষার আওতায় খাদ্য তালিকার অত্যন্ত কড়া নিয়ম অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীদের খেতে দেওয়া হয়েছিল ৷ তিন মাস ধরে তাঁদের দিনে শুধু ৯০০ ক্যালোরি পরিমাণ নিউট্রিশন শেক খেতে হয়েছে ৷ সেইসঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন ৷ বেশ কিছু ব্যায়ামও করতে হয়েছে ৷ তার ফল ছিল বেশ চমকপ্রদ ৷

যারা ৭ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন কমাতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে ৭ শতাংশ মানুষ পুরোপুরি ডায়াবেটিস ট্যাবলেট ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৷ যারা ১৫ কিলো ওজন কমাতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ এই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছেন ৷ ড. মাটিয়াস রিডেল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এই গবেষণা ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে ৷ ডাক্তার ও রোগীদের নতুন করে ভাবতে হবে ৷ সারা জীবন ধরে ট্যাবলেট ও ইনসুলিন গ্রহণ না করেও রোগ নিরাময় সম্ভব ৷''

ডিয়র্ক ফন গ্রুবে নিজের ওজন কমিয়ে ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের উপর নির্ভরতা কাটাতে পেরেছেন ৷ আগে তিনি সব সময়ে কিছু না কিছু খেয়ে যেতেন ৷ প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও তার মাঝে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ৷ এভাবে তিনি মোটা হতে হতে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন৷ ড. মাটিয়াস রিডেল এই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘শরীরের ইন্দ্রিয়গুলি ও পেটে মেদের আধিক্যই ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ৷ যত বেশি চর্বি, তত বেশি  ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় ৷ ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা যত বাড়ে, তত বেশি মেদ জমা হয় ৷ এই দুষ্টচক্র অনেক মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ এমনকি মৃত্যুও হতে পারে৷ তাই সেই চক্র ভেঙে দিতে হবে ৷''

শরীর কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে পরিণত করে ৷ প্যানক্রিয়া বা অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উৎপাদন করে, যা রক্ত থেকে শর্করা শরীরের কোষে পাঠায়৷ এভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে ৷

ঔষুধ ছাড়া ডায়বেটিসকে দূরে রাখার কিছু উপায় :

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে ওজন কমানো
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে অতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে ডায়বেটিস শতকরা ৯০ ভাগ কমানো সম্ভব ৷ যদি সে রোগীর ডায়বেটিসে ভোগার সময়কাল চার বছরের কম হয়ে থাকে ৷ একথা জানান, জার্মান ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ প্রফেসার স্টেফান মার্টিন৷

অতিরিক্ত চিনি খেলে কোষগুলি ইনসুলিন প্রতিরোধ করতে শেখে৷ ফলে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে অগ্ন্যাশয়ের উপর বেশি চাপ পড়ে৷ কোনো এক সময় ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায় ৷ তখন শর্করা আর রক্ত থেকে কোষের মধ্যে যায় না ৷ সেই শর্করা ভাঙতে তখন ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দিতে হয় ৷ ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ড. ক্র্যোগার বলেন, ‘‘ওজন যত বেশি হবে, ইনসুলিনের প্রভাব তত খারাপ হবে৷ অর্থাৎ আমি ওজন কমানোর চেষ্টা না করলে আমার শরীরের মধ্যের ইনসুলিনের প্রভাবের আরও অবনতি হয় ৷ এমনকি আমি ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিলে তার প্রভাবও খারাপ হয়৷ ফলে সহজেই ওজন বাড়তে থাকে ৷''

ডিয়র্ক ফন গ্রুবে একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে নিজের খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলেছিলেন ৷ এভাবে তিনি ২৩ কিলো ওজন কমিয়েছিলেন ৷ ফলে তিনি ওষুধ খাওয়াও অনেক কমাতে পেরেছিলেন ৷ ড. রিডেল তাঁকে মনে করিয়ে দেন, ‘‘যখন আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন, তখন অনেক ইঞ্জেকশন নিতে হতো ৷ আর এখন সামান্য কিছু ট্যাবলেট খেতে হয়৷ এমনটা অব্যাহত থাকলে আরও উন্নতি হবে ৷''

ডিয়র্ক ফন গ্রুবে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন ৷ তবে তিনি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা হিসেবে পুষ্টি ও ব্যায়ামের উপকারিতা পরখ করার আগেই ডাক্তার ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন লিখে দেন ৷

উলরিকে হাইমেস/এসবি 

ডায়েবেটিস থেকে সাবধান!
হালকা খাবার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়েবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ, অতিরিক্ত ওজন৷ ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ওজন কমাতে রাতে হালকা খাবার খাওয়া উচিত৷ রাতে ফুল প্লেট ভাত, পাস্তা বা নুডল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ জার্মান পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের৷ কারণ রাতে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে তা রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়৷

বাবা-মায়ের বদভ্যাস সন্তানের ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে
অতিরিক্ত ওজন ও ডায়াবেটিস আজকের প্রজন্মের জন্য একটা বড় সমস্যা ৷ কিন্তু এর জন্য কি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারাই দায়ী? নাকি সেই সমস্যা কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে জিনের মাধ্যমেও পেতে পারে? জার্মান বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ৷ 
তাদের মতে নিজের খাবার খাওয়া ও চরাচল ঠক রাখলে আর কোন ঝুকি থাকে না । 


একুশে সংবাদ/বর্না

লাইফস্টাইল বিভাগের আরো খবর