সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

২২ মামলার আসামি ও মন্ত্রীদের কথিত আত্মীয় গ্রেফতার

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিভিন্ন মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেয়া প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪২) কে দীর্ঘ সাত বছর পর আটক করেছে র‍্যাব-৭। আটক প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নস্থ কাটিরহাটের আবু তাহের চৌধুরীর পুত্র।

 

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ ওই প্রতারক কে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

আটক প্রতারক মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হাটহাজারী এবং কোতোয়ালী থানায় প্রতারণার ২২টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ১১টি মামলায় আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন এবং বর্তমানে ১১টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

 

এর আগে রবিবার ১৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত এগারোটার দিকে চট্টগ্রামের হামজারবাগস্থ আজাদ কমিউনিটি সেন্টারের উপরের জনৈক মসিউর রহমানের ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।

 

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরার সমুদ্র উপকূলবর্তী  একটি শীপ ইয়ার্ডে ২০১৫ সালের দিকে স্ক্রাপ হিসেবে বিক্রীর জন্য আনা প্রায় শত কোটি টাকার পুরানো একটি জাহাজ তার বলে দেখিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

 

এ কাজে সহযোগী হিসেবে সে আশেপাশের ২০/২৫ জন লোককে মাসিক বেতনে টাকা দিয়ে রাখত যারা তার হয়ে ভিকটিমদের বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিত। ভিকটিমগণ উক্ত ব্যবসার বিষয়ে যাচাই করার জন্য যখন আশেপাশের এলাকার খোঁজ-খবর নিতে যেতো তখন উক্ত লোকজন তাদের জানাত মেজবাহ স্যার খুবই ভাল মানুষ এবং তার ব্যবসার সবকিছু সঠিক রয়েছে।

 

ভিকটিমদের দেওয়া তথ্য মতে, এভাবে সে পর্যায়ক্রমে ও ধাপে ধাপে ভুক্তভোগী ভিকটিম আব্দুল হাকিম এর নিকট হতে ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, আজগর আলীর নিকট হতে ৭০ লক্ষ টাকা, মোঃ রেজওয়ানের নিকট হতে ৪০ লক্ষ টাকা, ইব্রাহীমের নিকট হতে ২০ লক্ষ টাকা, মোঃ রুমন এর নিকট হতে ৬৩ লক্ষ টাকা, শহিদুল ইসলাম এর নিকট হতে ৯০ লক্ষ টাকা, জাহিদুল ইসলাম এর নিকট হতে ৫০ লক্ষ টাকা, আসাদ এর নিকট হতে ৫০ লক্ষ টাকা, বেলাল এর নিকট হতে ৫০ লক্ষ টাকা এবং শাহজাহান এর নিকট হতে ২ কোটি টাকাসহ জানা অজানা অসংখ্য ভুক্তভোগীর নিকট হতে জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

 

এছাড়া প্রতারক মেজবাহ একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের নিকট হতে টাকা আদায় করত। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভূয়া দলিল দেখিয়ে অন্ততঃ ১০ জন ভিকটিমের নিকট বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

 

অভিযুক্ত প্রতারক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীদের নাম ভাঙ্গিয়ে তার ব্যবসার শেয়ার দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করত এবং পরবর্তীতে তাদেরকে কোম্পানীর শেয়ারের লভ্যংশের টাকা দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক প্রদান করত। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে দেখা যেত তার দেয়া চেকের বিপরীতে একাউন্টে কোন টাকা নেই। এভাবে সে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছিলো।

 

ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইলে সে ভুক্তভোগীদের পূর্বে সংরক্ষিত স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা রুজু করে নাজেহাল করতো। উক্ত মিথ্যে মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই ওই প্রতারকের কাছে পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতো না।

 

আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তাকে যেন ভুক্তভোগীরা সহজে খুজে না পায় সেজন্য সে তার নিজ জেলার স্থায়ী ঠিকানায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করত।

 

এছাড়াও সে তার একাধিক মোবাইলে ঘন ঘন সিম পরিবর্তন করে ব্যবহার করত যাতে তার সাথে কেউ সহজে যোগাযোগ করতে না পারে। বর্তমানে তাকে যাতে কেউ চিনতে না পারে সেজন্য সে হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করেছিলো।

 

এদিকে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে, উপরোক্ত প্রতারনার কথা নিজ মুখে অকপটে স্বীকার এবং বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে প্রতারনা করে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছে বলে জানায় সে। আর তার এসব অপকর্মে তার পরিবার তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতো বলেও সে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

 

পরে আটককৃত প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।


একুশে সংবাদ/মো.আ/এসএপি/

অপরাধ বিভাগের আরো খবর