সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

যত বড় হুজুরই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না : হানিফ  

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:৩৯ পিএম, ৮ এপ্রিল, ২০২১

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ স¤পাদক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, আমরা আজকে প্রশাসনকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। যারা এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত এবং যারা ইন্ধন দিয়ে পিছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন, তারা যে দলেরই নেতা হোক বা যত বড় হুজুরই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ সালথা উপজেলা পরিষদ পরিদর্শনে এসে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি আরও বলেন, লকডাউনকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে সালথা উপজেলায় যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও জ্বালাও-পুড়াও করেছেন তাদের প্রত্যেককে খুঁজে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। একজনও রেহাই পাবেন না। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আইনের সৃষ্টিতে সন্ত্রাসী, নাশকতা সৃষ্টিকারী, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রের শক্তির কাছে কোনও শক্তি ঘাটে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা এই সালথায় অমানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যারা অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে তারা কারা, তারা হলো দেশ বিরোধী, তারা এদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, তারা দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী না, তারা দুষ্টচক্র। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে।

সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা উপজেলা পরিষদের ধ্বংসস্তুপ পরিদর্শন করেন।

এদিকে ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার ঘটনায় আহত মিরান মোল্যা (৩৫) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের আবদুর রব মোল্যার ছেলে। বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিরান মোল্যা। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া। এ নিয়ে সহিংসতায় দুজনের মৃত্যু হলো।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, সালথায় তান্ডবের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটিতে প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীকে। অপর কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্যাকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সালথায় সহিংসতার ঘটনায় ৪ হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার সকাল ৮টার দিকে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে আসামি হিসেবে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৪ হাজার জনকে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা। তিনি বলেন, থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। মামলার এজাহারভুক্ত ১৩ আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামের ক্বারী ইনছুর শেখের ছেলে মো. নুরু শেখ (১৮), বিনোকদিয়া গ্রামের করিম কাজীর ছেলে মো. সজিব কাজী (১৯), ইউসুফদিয়া গ্রামের শাহজাহান মাতুব্বরের ছেলে রাব্বি মাতুব্বর (১৯), মিনাজদিয়া গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. ইউনুস মাতুব্বর (৬০), গোপালিয়া গ্রামের সালাম মোল্যার ছেলে আমির মোল্যা (৩০)।

এ ছাড়া ফুকরা গ্রামের গ্রামের সুলতান শেখের ছেলে আবুল কালাম শেখ (৩৫), রিপন শেখ (৩২), ইসরাইল মোল্যার ছেলে ইলিয়াস মোল্যা (২৭), চিলারকান্দা গ্রামের খালেক শেখের ছেলে শহিদুল শেখ (৩২), পিসনাইল গ্রামের গ্রামের ঝিলু ফকিরের ছেলে মো. রুবেল ফকির (২৫), সোনাপুর গ্রামের মিজানুর শেখের ছেলে মো. রাকিবুল ইসলাম (১৮) ও বিনোকদিয়া গ্রামের আইয়ুব মোল্যার ছেলে মো. সাইফুল ইসলামকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় ৪ হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করে মামলা দায়ের হওয়ায় এলাকা জনশুন্য হয়ে পড়েছে। সদর এলাকায় লোকজনের আনাগোনা একবারেই নেই বললেই চলে। রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা রয়েছে।

উল্লেখ্য গত সোমবার  ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এ সময় তার গাড়ি থেকে নেমে কয়েক ব্যক্তি বাজারে উপস্থিত কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে। 

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা পুলিশের গুলিতে কয়েক জনের মৃত্যু ও স্থানীয় হেফাজত নেতা মাওলানা আকরাম আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও থানায় এই তান্ডব চালায়। এ সময় ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সালথা থানার পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা থানার পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। জুবায়ের হোসেন (২০) ও মিরান মোল্ল্যা (৩৫) নামে দুই যুবক নিহত হয়।

একুশে সংবাদ/রা/আ

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর