সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

 গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষে তিন তরুণের সাফল্য

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১১ মে, ২০২১

সারাদেশে গরমকালে তরমুজ যখন কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এবং লাভ জনক একটি মৌসুমী ফল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তখন কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিন শিক্ষিত বেকার তরুণ উদ্যোক্তা নতুন জাতের গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছে।

প্রায় দেড় বিঘা জমিতে আশি হাজার টাকা খরচ করে আয় করার সুযোগ হয়েছে তাদের প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। ফলে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অন্যান্য চাষিরা। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রামে এভাবেই কৃষি বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তর হবে। সরেজমিনে রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিশ্বর তালুক
গ্রামে কথা হয় রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার শম্পা আকতারের সাথে। তিনি মাঠ পরিদর্শনে এসে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের বাম্পার ফলন দেখে ভীষণ খুশি।

এসময় সাংবাদিকদের তিনি জানান, অনার্স পড়–য়া তিন বেকার তরুণ আমার কাছে এসে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল তারা উচ্চ ফলনশীল তরমুজ আবাদ করতে চায়। তাদের আগ্রহ দেখে অন্যান্য উদ্যোক্তাসহ ৭ দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণ পরবর্তী তিন তরুণ জমির ব্যবস্থা করল। পরীক্ষা মূলক ভাবে তাইওয়ান জাতের সুস্বাদু গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের বীজ আনা হল চুয়াডাঙ্গা থেকে। এরপর তিন তরুণের কায়িক শ্রমে সফলতার মুখ দেখে তারা।

প্রায় ২ মাস ২ দিনের মাথায় তারা তরমুজ উত্তোলনে সফল হয়। এভাবে তরুণরা এগিয়ে এলে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন হবে। সেই সাথে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হবে। উদ্যোক্তা নুর আলম, মাহবুবুল হাসান জিম ও মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা তিন বন্ধু প্রায় দেড় বছর ধরে বসে ছিলাম।একদিকে করোনার প্রভাব। অপরদিকে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরিবারে অভাব অনটন লেগে আছে। ফলে কিছুদিন আমরা ঢাকায় গিয়ে
গার্মেন্টসে কাজ করে নগদ কিছু অর্থ উপার্জন করে পরিবারে সহায়তা করার চেষ্টা করি। এসময় আমরা আলাপ করি কেন নিজেরাই এলাকায় গিয়ে কিছু করি না কেন! যাতে অন্য যুবকরাও আমাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়।

এই আগ্রহ থেকে আমরা ইউটিউবে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ ও এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে আগ্রহী
হয়ে উঠি। পরে কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে তাদেরও সহযোগিতা পাই। এরপর আমরা পরিবারে এনিয়ে কথা বলি। পরে মনিরুল ২০ হাজার, নুর আলম ও জিম ৩০ হাজার করে মোট ৮০ হাজার টাকা সংগ্রহ করি। এরপর প্রতিবেশী সেকেন্দার মাস্টারের কাছ থেকে ১৫ শতক জমি এবং অপর প্রতিবেশী আনিসুর রহমানের কাছ থেকে ৩০ শতক জমিতে নতুন জাতের তরমুজ চাষের কথা বলে এক সিজনের জন্য লিজ নেই। তাদেরকে হয়তো এখানকার বর্তমান
বাজার মূল্য হিসেবে ৫ শতক জমি ১ হাজার টাকা হিসেবে ৪৫শতক জমির জন্য ৮ হাজার টাকা দেয়া লাগতে পারে।

আমরা প্রথমে ৭০ গ্রাম তাইওয়ান জাতের গোল্ডেন ক্রাউন বীজ সংগ্রহ করে জমিতে বুনি। পরে ৭ দিনের চারা জমিতে রোপণ করি। এই তরমুজ ৫৫ দিনের মধ্যে উত্তোলন করা গেলেও অনভিজ্ঞতার কারণে গ্রোথ থেমে গেলেও আমরা বুঝতে পারিনি। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঔষধ স্প্রে করে আমরা ৬২ দিনের মাথায় প্রথম কর্তনে প্রায় ২০০ তরমুজ উত্তোলন করি। যার গড় ওজন দেড় থেকে পৌনে দুই কেজি। প্রতিটি তরমুজ দেড়শ টাকা করে বিক্রি করি।

তিন উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, নুর আলম রাজারহাট মীর ঈসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজে ১ম বর্ষ অনার্সে একাউন্টস নিয়ে পড়াশুনা করে। তার পিতার নাম আবু হোসেন। মনিরুল ইসলামও একই বিষয়ে পড়ছে, তার পিতার নাম রিয়াজুল ইসলাম। অপর বন্ধু মাহবুবুল হাসান জিম রংপুরে ইমেজ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ৮ম সেমিস্টারে পড়াশুনা করছে। তার পিতার নাম মশিউর রহমান। তিন জনের বাড়ী রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের পাশে হরিশ্বর তালুক গ্রামে। তাদের তরমুজের জমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দক্ষিণ দেয়াল ঘেঁষে।
তিন তরুণ উদ্যোক্তা সম্পর্কে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে তাসনিম জানান, এই তরমুজে দ্বিগুণ পুষ্টিমান ও দ্বিগুণ মিষ্টতা রয়েছে। স্থানীয় বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।

বাণিজ্যিকভাবে প্রসার করতে পারলে অনেক তরুণ নিজেরাই কৃষিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। আমরা চাই অন্যান্যরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এই তরমুজ চাষে এগিয়ে আসুক।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, হলুদ রঙের এই ফলটি বাজারের অন্যান্য তরমুজের চেয়ে দ্বিগুণ সুস্বাদু। ৬০দিনের মধ্যে এর ফলন হয়। সর্বোচ্চ ওজন দুই কেজির মত। এক বিঘায় খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা এবং লাভ হবে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। জেলায় এটি প্রথম বাণিজ্যিক ফসল। এটি লাভ জনক ফসল। তরুণ উদ্যোক্তারা এটি বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে ধারণ করেছে। আমরা আশা করবো
এভাবেই কুড়িগ্রামের কৃষি বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তর হবে।

আনোয়ার হোসেন
 

কৃষি বিভাগের আরো খবর