সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রপ্তানি উন্নয়নে চাঙ্গাভাব

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে প্লাস্টিক

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ২ এপ্রিল, ২০২৪

রপ্তানি বাণিজ্যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে নয়া দিগন্তের পথে। গার্মেন্টস শিল্পের বিকল্প বাজার সৃষ্টি হওয়ায় চাঙ্গা হয়ে উঠছে অর্থনীতি। রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে প্লাস্টিক সামগ্রী। চলতি অর্থ বছরে বিভিন্ন সেক্টর থেকে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। পণ্য রপ্তানি গত ফেব্রুয়ারিতে ১২ শতাংশ বেড়েছে। মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৫১৯ কোটি ডলারের পণ্য। গত জানুয়ারিতে ৫৭২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল আর প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

গত কয়েক মাস পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হারও কিছুটা বেড়েছে। চলতি ২০২৩—২৪ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো গত মাসে পণ্য রপ্তানির এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।

এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে অন্য বড় খাত যেমন হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬৪ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতামূলক দামে সরবরাহের পাশাপাশি নতুন বাজারে চালান পাঠানোয় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ১৭ শতাংশ বেড়ে ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলার হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর  তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের যেকোনো বছরের একই সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও নেপালে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করা হয়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গবেষণায় দেখা গেছে, নানা ধরনের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করলেও প্যাকেজিং পণ্যের বেশিরভাগই টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার।

প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা:

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির বক্তব্য থেকে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা পালন করছে। ডলার সংকট ও কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে অসুবিধাসহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও এই খাত রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে।

জানা গেছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বমানের প্লাস্টিক তৈরি করছে। এটি বিদেশিদের বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী করে তুলছে। এক প্লাস্টিক ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী বলেন, সরকার যদি বিদেশে মিশনের মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন বাজার খুঁজতে সহায়তা করে তাহলে রপ্তানি আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বাধা মুক্ত হওয়ায় প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। বড় জাহাজ পাওয়া যাওয়ায় এটি চালান বাড়াতে সহায়তা করছে। ‍‍`পণ্য পরিবহন খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও কমতে পারে। ধারণা করা যায়, পশ্চিমা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় এ বছর এ খাতের রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।

‍‍`পণ্যের দাম বাড়াতে না পারলেও মুনাফা বাড়াতে আমরা উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি বলে মন্তব্য করেন এক প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত কারক। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে পলিওলেফিন উৎপাদন সুবিধা না থাকলেও বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৪২টির বেশি পণ্য তৈরি করছে। বাংলাদেশ প্রধানত ফিল্ম প্লাস্টিক, গৃহস্থালি সামগ্রী ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ রপ্তানি করে।সামগ্রিকভাবে রপ্তানি বাড়লেও সব প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নিতে পারেনি বলে জানা যায়।

আন্তর্জাতিক বাজারে এই খাতকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে দেশীয় বাজারকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা। তারা   বলেন, ‍‍`স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও  সুরক্ষা দেওয়া দরকার। এতে করে আরও কম খরচে পণ্য উৎপাদন বাড়ানো যাবে। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

গার্মেন্টস‍‍`র বিকল্প বাজার :
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের মূল উৎস তৈরি পোশাক খাত, যেখান থেকে বিজিএমইএ’র হিসেবে গত বছর এসেছে ৪৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এরমধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে আমেরিকা থেকে ৭.২৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও এই আয় আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। তবে আমেরিকায় ২৫ শতাংশ রপ্তানি কমে গেলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেনি বরং বেড়েছে।

এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডলারের অংকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে জাপান থেকে। বিজিএমইএ’র সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সেখান থেকে আয় ছিল একশো এগারো মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালে সেটা বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে অর্থাৎ ১.৬৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, তুরস্ক, সৌদি আরব, রাশিয়াএমনকি ভারতের মতো দেশগুলোতেও রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।


একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর