সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বঙ্গবন্ধু: অগ্নিঝরা মার্চ এবং ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ১৬ মার্চ, ২০২৩

ক্যালেন্ডারের পাতায় মার্চ মাসটি বাঙালির কাছে ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ হিসাবে চিহ্নিত। আর বিশ্বে এক মানব দেবতার জন্ম ও সংগ্রামের ইতিহাস হিসাবে বিবেচিত। এই মার্চ মাসেই বাঙলার অবিসংবাদীত নেতা, বাঙলালি জাতির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। দিনটি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। স্থান অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।

 

২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বনেতাদের মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে শুগা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো  ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ।

 

ইতিহাসের পথ বেয়ে

 

মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ। এদিন রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৮-৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬২-তে শিক্ষা আন্দোলন,  ৬৬-তে ৬ দফা আন্দোলন এবং ৬৯-এর  ১১দফা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে হাজির হলেন গণনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

 

সেদিন বাঙলার নানা প্রান্ত থেকে মাথায় গামছা, হাতে বৈঠা এবং কাঁধে আস্ত নৌকা বহন করে রেসকোর্স ময়দানে হাজির হয়েছিলেন  বাঙলার লাখো জনতা।  আকাশ-বাতাশ কাঁপিয়ে গগনবিদারি স্লোগান উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে চারিদিকে। সেদিন সন্তানকে মিছিলে পাঠিয়ে ‘বর্বর জালিমদে’র কবল থেকে বঙ্গবন্ধু এবং দেশজাতির মুক্তি জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনায় বসেন লাখো মা। বাঙলার কলকারখানার শ্রমিক, মাঠের কৃষক, বাড়ির মায়েদের কাজ সব কিছু প্রায় বন্ধ। তারা অপেক্ষায় ‘মানবদেবতার’ নির্দেশনার। অবশেষে সেই ডাকই পেল বাঙলার মানুষ।

 

‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’

 

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণই মূলত বাঙলির মুক্তির সনদ। সেদিনের ঘোষণাই মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ঘোষণা।

 

‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, 

তোমাদের যা কিছু আছে,

তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো’,

 

বঙ্গবন্ধুর এই ডাকের অপেক্ষায় ছিলো বাঙলার মানুষ। অকুতোভয় সন্তানেরা তৈরি হলেন মা, মাটি  মানুষকে মুক্তি জন্য। ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিসংগ্রামে।      ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আজ বিশ্ব হ্যারিটেজ। শুধু তাই নয়, তার ভাষণ এবং নিপীড়িত জাতিকে মুক্ত করার ইতিহাস বঙ্গবন্ধু ‘বিশ্ববাসীর কাছে একজন গণমানুষের নেতা হয়ে ওঠেন’। বঙ্গবন্ধুকে কুর্ণিশ করেছেন, কিউবান বিপ্লবের রূপকার ফিদেল কাস্ত্রো, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপ্লবী নেতা ল্যানসন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত। 

 

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ঠিক ১৮দিন পর ২৫ মার্চ রাতে  পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনী বাঙলার নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা পৃথিবীর জঘণ্যতম গণহত্যা চালায়। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর নৃশস গণহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা মানুষকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে তোলে।

 

৭১’র অগ্নিগর্ভ মার্চ পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার আদায়ের মাস। নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদ ও অগণন মাবোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লালসবুজ খচিত পতাকা অর্জন করে বীর বাঙলাী।  ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছর গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর্যের মাধ্যমে দিনটি পালন করে বাঙালি জাতি।

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর