সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হজ খরচ কমাতে ফের লিগ্যাল নোটিশ, সুযোগ নেই বললেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ১২ মার্চ, ২০২৩

চলতি বছরের হজ প্যাকেজ সংশোধন করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। হাবিবুর রহমান, আব্দুল আজিজ ও আব্দুল হাইয়ের পক্ষে রোববার (১২ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল এ নোটিশ পাঠান।

 

নোটিশে বিমানভাড়া কমানোসহ হজ প্যাকেজ সংশোধন, পরিবর্তন ও পুনর্নির্ধারণ করে নতুন প্যাকেজ ঘোষণার অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া হজযাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট কিনতে বাধ্য করা হয়। যা যাত্রীদের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। এ নিয়মেও পরিবর্তনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

এতে আরো জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরআগে গত ৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।

 

এদিকে আজ (১২ মার্চ)  ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, চলতি বছর হজের খরচ কমানো কিংবা প‌্যাকেজ পুনর্বিবেচনা কোনো সুযোগ নেই।

 

লিগ্যাল নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটা আমাদের হাতে এখনও আসেনি। আসলে এটা নিয়ে আমাদের যা করণীয় আমরা করবো।”

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে হজ ফ্লাইট | Dhaka Tribune Bangla

হজের খরচ কমানো বা প্যাকেজ পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ থাকলেও আমরা নিজেরাই তো চাপ দিয়ে করতাম (খরচ কমানো)।”

 

ফরিদুল হক খান বলেন, “সৌদি আরবের মিনায় বাসস্থানের জন্য এবার এক লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। টাকার বিপরীতে রিয়ালের দাম বাড়ার কারণে এবার ৬৩ হাজার টাকা বেড়েছে। বিমানভাড়াও বেড়েছে।”

 

হজযাত্রীদের বিমানভাড়া অনেক বেশি নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিমানভাড়া বাড়তো না, এটা কিন্তু ডেডিকেটেড ফ্লাইট। এখানে হজযাত্রী ছাড়া অন্য কোনো যাত্রী নেওয়া হবে না। বিমান জেদ্দাতে হজযাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে খালি আসবে। প্রধানমন্ত্রী কোনোভাবেই চান না দেশের মানুষের ওপর চাপ পড়ুক। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হজযাত্রীদের ওপর চাপটা পড়েছে। মানুষের বুঝতে হয়তো সময় লাগছে। মানুষ প্রথমে বুঝতে পারেনি, এখন আসল ঘটনাটা বুঝতে পারছে।”

Hajj Yatra 2023 : হজ যাত্রায় VIP কোটা বন্ধ করল কেন্দ্র, বড় সিদ্ধান্ত মোদী  সরকারের - central governments vip quota scrapped for haj yatri official  announcement soon sus - Aaj Tak Bangla

সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৭৩ হাজার ২০৮ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন রোববার (১২ মার্চ) সকালে হজ পোর্টাল থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এরমধ‌্যে সরকারিভাবে ৯ হাজার ২৮৯ জন ও বেসরকারিভাবে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন নিবন্ধন করেছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে তা দুই দফা বাড়িয়ে ১৬ মার্চ পর্যন্ত করা হয়।

 

এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কোটা যাতে পূর্ণ হয় এজন্য আমরা দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছি। প্রাক-নিবন্ধনের একটা ক্রমিক পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়ে নিবন্ধনের সময় দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে যারা নিবন্ধন করছেন না, পরে সময় বাড়িয়ে প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একবারে সময় দিলে এটা করা যেতো না। আবার একসঙ্গে প্রাক-নিবন্ধনের বেশি সংখ্যককে নিবন্ধনের সুযোগ দিলে সবাই যদি নিবন্ধন করেন, তবে তো আমি সবাইকে পাঠাতে পারবো না। তাই ধাপে ধাপে নিবন্ধনের সময় বাড়ানোতে সুবিধা রয়েছে।”

 

দেরির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নিবন্ধনে দেরি হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, আমাদের এজেন্সিগুলো বাড়িভাড়া করতে দেরি করছে। কোথায় একটু কমে পাবেন না পাবেন, সেটা চিন্তা করছেন। ভাড়া না নেওয়া পর্যন্ত এখন থেকে ক্লিয়ারেন্স পাবেন না। নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবে না। কোটা পূরণ হবে বলে আমি আশাবাদী। না হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

গত বছর হজে অনিয়ম করা এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সামনে যাতে কেউ অনিয়ম করতে না পারেন, সেজন্য যেমন ব্যবস্থা নিয়েছিলাম এবারও তেমনই থাকবে। অনিয়ম আগের চেয়ে অনেক কমেছে। গত বছরের হজ নিয়ে তেমন কোনো সমালোচনা হয়নি।”

 

তিনি আরও বলেন, “গত বছর ৩৫ দিন আগে সৌদি আরব আমাদের টেলিফোন করে জানিয়েছিল। চিঠি পেয়েছি ১৯ দিন আগে। আমরা ১৯ দিনে কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়েছি ইনশাআল্লাহ। এবার তো আমরা অনেক সময় পেয়েছি। কাজেই এবার তো সেই ধরনের তাড়াহুড়ো নেই। আমি বিশ্বাস করি, আগের চেয়ে ভালো হবে।”

 

এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজের জন্য সরকারিভাবে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। আর বেসরকারি হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছর সরকারিভাবে হজে যাওয়ার খরচ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা এবং কুরবানি ছাড়া প্যাকেজের খরচ ছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৪৯ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছর হজের খরচ দেড় লাখ থেকে ২ লাখ ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

 

মালয়েশিয়ায় হজের এ বছর সরকারিভাবে হজের খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা এবং ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। তবে দেশটিতে বেসরকারি হজ প্যাকেজগুলো বাংলাদেশি মুদ্রায় নয় লাখ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে এ বছর হজে যাওয়ার জন্য খরচ হবে বাংলাদেশি টাকায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। বাকিটা সরকারি ‘হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ তহবিল থেকে ভর্তুকি দেওয়া হবে। ভারতে হজের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হলেও চূড়ান্ত খরচের হিসাব এখনো জানানো হয়নি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর হজ প্যাকেজের খরচ ৫০ হাজার টাকা কমানো হবে। অর্থাৎ হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে যারা হজে যাবেন, তাদের খরচ হবে চার লাখ টাকার কম। পাকিস্তানে গত বছরের তুলনায় হজের খরচ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দেশটিতে এ বছর হজযাত্রীদের খরচ ১১ লাখ ৭০ হাজার পাকিস্তানি রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে গত বছরের তুলনায় হজের খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার ডলার। সেখানে সবচেয়ে কম প্যাকেজের জন্য দিতে হবে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা।

 

হজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবী আসাদুল ইসলাম। খরচ বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “নতুন করে হজের খরচ বৃদ্ধিতে চরম সংকটে পড়েছি। গত বছর বুকিং দিয়ে রেখেছি। টাকাও জোগাড় করে রেখেছি। হজের টাকা ঋণ করে নেওয়া যায় না। কারও কাছ থেকে চেয়েও নেওয়া যায় না। নিজের উপার্জনের টাকায় হজে যেতে হয়। ফলে এখন এই অতিরিক্ত টাকা জোগাড় করতে মহাবিপাকে পড়েছি।”

 

এর আগে ‘হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে‍‍` (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানিয়েছিলেন, “বিমানের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এই খরচ বেড়েছে। বিমান এবার ভাড়া বাড়িয়েছে ৭০ হাজার টাকা। কেন তারা এই ভাড়া বাড়িয়েছে তার কোনো উত্তর আমাদের কাছে নেই। আমরা আগেই বলেছি, একটা কমিটির মাধ্যমেই এই ভাড়াটা নির্ধারণ করা হোক। কারণ, বিমান একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবে আর আমাদের সবাইকে সেটা মেনে নিতে হবে, এটা কেমন কথা? আমি তো মনে করি, হজ ফ্লাইটে তাদের খরচ অনেক কম। মার্কেটিং লাগে না। শতভাগ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটগুলো যায়। অথচ নিয়মিত ফ্লাইটে যাত্রী থাকে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। এসব মিলিয়ে খরচ বাড়ার বড় কারণ বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি। এছাড়া গত বছর যেখানে রিয়ালের বিনিময়-মূল্য ছিল ২১ টাকা, এবার সেটা ৩০ টাকা ছুঁইছুঁই। এটাও একটা কারণ।”

 

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন।

 

এ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে গমনকারী শতভাগ হজযাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ‍‍`মক্কা রোড চুক্তি‍‍` অনুযায়ী বিমানবন্দরেই অনুষ্ঠিত হবে।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর