সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে গোবরা ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুরের দুর্নীতি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১০:২৪ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

এলজিএসপি, মসজিদ মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার, অবিবাহিত সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করে কু-প্রস্তাব, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়া সহ নানা অভিযোগ রয়েছে গোপালগঞ্জের ২০নং গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান চৌধুরী টুটুলের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী জানায়, চেয়ারম্যান পদটি পাবার পর থেকেই তিনি টাকার কুমির হয়ে উঠেছেন।

 

এছাড়াও জন্মসনদ, নাগরিক সনদ ও যাবতীয় প্রত্যয়ন পত্রের বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ফলে পুরো পরিষদই যেনো দুর্নীতির আঁতুরঘর বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। এভাবে প্রতিটি নাগরিককে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে চেয়ারম্যান সফিকুর রহমানের দুর্নীতির অভিশাপ।

 

অভিযোগ সূত্র বলছে, রেললাইন প্রকল্পে ঘোনাপাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার করে অধিগৃহনকৃত জমি থেকে গাছ ও বাঁশ জোরপূর্বক বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি ও তার অনুসারীরা। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে তালাক দিতে বাধ্য করেন। এমনকি অবিবাহিত সুন্দরী মেয়েদেরকে টার্গেট করে কু-প্রস্তাবসহ নারীদের বিয়ে আটকিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

বেকার ২২ তরুণকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ টাকা করে মোট ৪৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্যের সম্পত্তিতে সম্পূর্ণ গোপনে প্রকল্প দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন। শুধু এটিই নয়, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামেও বরাদ্দ করে টাকা আত্মসাৎ করেন এই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান টুটুল।

 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত হতদরিদ্র পরিবারের জন্য বরাদ্দ সেমিপাকা ও টিনেরঘর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বণ্টন করায় সাধারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হয়েছে।

 

ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ধারা ৩৪(৪) (ঘ) অনুযায়ী অসদাচারণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চেয়ারম্যান পরিষদের আয়ের কোটি টাকা ভূঁয়া প্রকল্প দেখিয়ে অনৈতিকভাবে আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান। পরিষদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম-দুর্নীতির এসব অভিযোগের প্রমাণসহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)কে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।

 

অভিযোগে দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা-স্বজনপ্রীতি ও নানান অনিয়মের মাধ্যমেও চেয়ারম্যান টুটুল অবৈধ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থা কর্তৃক করা প্রকল্পের তথ্য গোপন করে সুকৌশলে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান সচিবের সহযোগিতায় অনিয়মে অর্থ আত্মসাৎ করেন। ভিজিএফ চাউল-গম জনপ্রতি ১২-১০ কেজি করে দেয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান দিয়েছেন ৫-৬ কেজি। কোভিড-১৯ মহামারিতে ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় চার দফায় বরাদ্দ ১২ টন ৫২০ কেজি চাউল এক হাজার ২৫২ জনের জন্য ১০ কেজি করে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ১১ জন এমইউপির ওয়ার্ড ভিত্তিক ৪৮ জন করে ৫২৮ জনের তালিকা জমা নিয়ে বাকী ৭২৪ জনের তালিকা চেয়ারম্যান নিজের করে বরাদ্দ দেন।

 

অভিযোগ রয়েছে, তিনি দায়িত্ব পাবার পরই টাকার পাহাড় গড়তে মরিয়া হয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেন। টিআর-কাবিখা প্রকল্পের কাজ না করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ, কর্মসৃজন প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়ম, জেলে ভাতার মনগড়া তালিকা, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণ না করে টুটুল নিজে আত্মসাৎ করেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিষদ সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেন, পরিষদের আয়-ব্যয় হিসাব দেখলে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলবে। ছাত্রলীগ নেতা থাকাকালে দৃশ্যমান কিছু না থাকলেও চেয়ারম্যান হবার পর টাকার কুমির হয়ে গেছেন। গড়েছেন রাজধানী মিরপুরে কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট। নিজ এলাকায় রয়েছে শত বিঘা সম্পতি। ঢাকা ব্যাংকে এফডিআরসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে একাউন্ট করে জমা করেছেন কোটি কোটি টাকা।  

 

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান চৌধুরী টুটুল মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য নয়। সামনে নির্বাচন তাই প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে উঠে পরে লেগেছে। নারীদের বিষয় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ব্যাক্তিগত কোনো বিষয় আমি কথা বলতে চাই না। আমার স্ত্রীর সঙ্গে কাট-ছাট হয়েছে। তবে আমি সন্তানদের খোঁজ খবর নিচ্ছি।

 

তিনি আরো বলেন, আমার জনপ্রিয়তা দেখে মিথ্যা অপবাধ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

 

একুশে সংবাদ.কম

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর