সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

৩৩’শ টাকা পুঁজিতে বাবুল দম্পতির আয় এখন ৫ লাখ টাকা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:০৯ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মাত্র ৩৩শ’ টাকা পুঁজি নিয়ে চিনা হাঁসের খামার করে এখন বছরে ৫ লাখ টাকা আয় করছেন লক্ষ্মীপুরে এক দম্পতি। 

 

ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর দৃড় মনোবল নিজেদেকে এক সফল খামারী হিসেবে গড়ে তুলেছে। বেকারত্ব আর অভাব অনটনের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। তাদের এমন সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এখন হাঁস পালন ও খামার স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

 

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্ব নন্দনপুর গ্রামে মহি উদ্দিন বাবুল ও সুমাইয়া ইসলাম দম্পতির বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তোলেন চিনা হাঁসের খামার। মূলত এই দম্পতি ২০০৪ সাল থেকে শুরু করেন মুরগীর খামার। খাদ্যসহ সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি কারণে মুরগীর খামারে লোকসান হয় তাদের। এরই মাঝে স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম লক্ষ্মীপুর যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে হাঁস-মুরগী পালনের প্রশিক্ষণ নেন।

 

করোনার শুরুর দিকে ঘরবন্দি হওয়া আর মুরগীতে লোকসানের কারণে সংসারে দেখা দেয় অভাব অনটন। পরে ১শ’ টাকা দরে ৩৩টি চিনা হাঁস ক্রয় করে শুরু করেন হাঁস পালন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাদেন। এভাবেই শুরু হয় বাবুল-সুমাইয়া দম্পতির হাঁসের খামারে পথ চলা। 

 

এখন তাদের খামারে প্রায় ৫’শ হাঁস আছে। প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি ডিম দেয়। কিছু ডিম বিক্রি করেন আর বাকী ডিম থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাচ্চা ফোটান। এ দম্পতির খামারে ১ দিনের হাঁসের বাচ্চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী হাঁস বিক্রি করেন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। এতে এই দম্পতির বছরে আয় হয় ৫ লক্ষ টাকা।

 

মহিউদ্দিন বাবুল ও সুমাইয়া ইসলাম জানান, ১০-১১ বছর মুরগীর খামার করে লোকসান হয়েছে। করোনার সময় সংসারে অভাব দেখা দেয়। কোনো কাজও খুঁজে না পেয়ে স্ত্রীর নেওয়া প্রশিক্ষণে কিছু হাঁস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। নিজে না খেয়ে সন্তানের মত হাঁসগুলোকে লালন-পালন করেছি। এখন প্রতিদিন টাকার দেখা পাচ্ছি। হাঁসের খাবারের পিছনে খুব একটা বেশি খরচ করতে হয় না। চিনা জাতের এই হাঁসগুলোর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। প্রতি মাসে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ দিয়েই ভালোভাবে চলছে বাবুলের সংসার।

 

তবে, এ দম্পতির অভিযোগ, হাঁস পালনে প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। করোনাকালীন সময়ে প্রণোদনায় নাম অর্ন্তভূক্তি করে নিলেও তারও দেখা মেলেনি এখনও। খামারের প্রসার ঘটাতে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তারা।

 

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বাবুল দম্পতির হাঁসের খামারটি দেখতে অনেকেই আসছেন। তাদের ইচ্ছে আছে এ এরকম একটি খামার করার। তাছাড়া গ্রামের মানুষের ডিম বা হাঁস কিনতে বাজারে যেতে হয় না। এছাড়া হাঁস পালনের জন্য লক্ষ্মীপুর উপযুক্ত স্থান। ডিম ও হাঁসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন খামারি। স্বল্প খরচে হাঁস চাষ করে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রচুর আয় করা সম্ভব।

 

প্রণোদনা এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগ সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ স্বীকার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ যোবায়ের হোসেন জানান, শ্রীঘ্রই হাঁসের খামারটি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করা হবে। প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সব ধরনের সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।

 

বাবুল দম্পতির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে লক্ষ্মীপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো: হুমায়ুন কবীর বলেন, সুমাইয়া ইসলাম ১৩তম ব্যাচে হাঁস-মুরগী পালনের প্রশিক্ষণ নেন। সে অত্যান্ত মেধাবী ছিল। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর নিজ উদ্যোগে খামার দিয়ে এখন স্বাবলম্বী। তার হাঁস খামারের পরিধি বাড়াতে যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ সহযোগিতা দেয়া হবে জানান তিনি।

 

একুশে সংবাদ/র.ই.খা/এসএপি/

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর