সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

আমার টাকায় আমার সেতু, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ২৩ জুন, ২০২২

বাঙ্গালীর সাহসের প্রতীক, সক্ষমতার প্রতীক, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে মাইলফলক পদ্মা সেতু।  পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়। স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বহুল আলোচিত বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর যাত্রা শুরু হচ্ছে ২৫ জুন।

 

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি সত্যিই গৌরবের দিন। আগামী শনিবার ২৫ জুন যাত্রা করবে বাংলাদেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

 

সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচনের পর টোলপ্লাজায় প্রথম টোল প্রধান করে স্বপ্নের পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।  আর মাদারীপুরের শিবচরে হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। এসব আয়োজনের প্রস্তুতিকে ঘিরে নেয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা।

 

পদ্মা সেতুর, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একুশটি জেলার জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও দাবি ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর মত একজন ভিশনারি লিডার। তিনি পদ্মা নদীর উপর সেতুর শুধু স্বপ্নই দেখেননি তার বাস্তব দেখতে চেয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণের বাস্তব ও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার পদ্মা সেতু তৈরীর উদ্যোগ হাতে নেয়। সাধারন জনগণের মনে আবার আশা জাগে এই সেতু নিয়ে। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মানুষের মনে এত আশা ঠিক তখনি সবাইকে হতাশার খবর দিল বিশ্বব্যাংক। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি স্থগিত করে দেয়। ঋণচুক্তি স্থগিত করলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন পদ্মা সেতু অবশ্যই হবে।

তবে তা নিজস্ব অর্থায়নেই। অন্যের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা এনে পদ্মা সেতু করব না। আমাদের জনগণের টাকায়ই পদ্মা সেতু নির্মিত হবে। 

 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে টেন্ডার আহ্বান করে। পরিকল্পনা ছিল ২০১১ সালের প্রথম দিকে সেতুর কাজ শুরু হবে এবং ২০১৩ সালের মধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অভিযোগে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

 

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর কাজ হাতে নিয়েছিল। ২০০৭ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় সেতুর নকসা তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা । তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি।

 

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয় লাভ করে। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্তেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রতি ছিল। সরকার গঠন করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেন।

 

২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুতে রেলপথ সংযোজনের জন্য নির্দেশনা দেন। তাঁর নির্দেশ মত সেতুর ডিজাইন বা নকসা পরিবর্তন করা হয়। উপরে মোটরযান সড়ক এবং নিচে রেলপথ অর্থাৎ দোতলা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।

 

দেশের উন্নয়ণ, কল্যাণ ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে শেখ হাসিনা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। নিজ মেধা, বিচক্ষণতা ও পরিকল্পনায় সকল অভিলাষ একটির পর একটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ণের শিখরে।

 

২০১১ সালে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। ২০১৬ সালে এই ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। ২০১৮ সালে মূল সেতু, নদী শাসন, জমি অধিগ্রহণ, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পুনর্বাসন, কর্মীদের বেতন সব মিলিয়ে তৃতীয় বারের মত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে ৪০০০ কর্মী। ২০০৭ সালে মার্কিন ডলার ও টাকার বিনিময় হার ছিল ৬৮.৬৫ টাকা। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলারের মূল্য ছিল ৬৮.৬৫ টাকা। ২০১৮ সালে এই হার হয় ৮৪.৮০ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে প্রকল্প ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়।

 

৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮.২ মিটার প্রস্থের পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশ তথা পদ্মা, মেঘনা ও ব্রক্ষপুত্র নদীর উপর সবচেয়ে বৃহৎ সেতু। সেতুটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এবং শরীয়তপুরের জাজিরাকে সংযুক্ত করেছে। পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা হবে ৬০ ফুট।

মোট পিলার ৪২ টি। কনক্রিট ও ষ্টীল সামগ্রী দিয়ে সেতু নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি পিলারের জন্য পাইলিং ৬টি। পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৬৪টি। পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ফুট।

 

শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০ টায় সেখানে সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচনের পর টোলপ্লাজায় টোল দিয়ে পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। মাওয়া প্রান্তে রঙ-বেরঙ এর ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা পদ্মাসেতু এলাকা।

 

একুশে সংবাদ.কম/জা.হা

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর