ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের দুবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক জজ মিয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সহায়সম্বলহীন সাবেক এমপি এনামুল হক জজ মিয়ার একসময় সবই ছিল। তবে ক্ষমতা, অর্থ, সম্পদ, সম্মান সব কিছু হারিয়ে এখন পৌর শহরের সালটিয়া গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় আট বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে পড়ে আছেন একসময়ের প্রতাপশালী এমপি এনামুল হক জজ।
তার স্ত্রী-সন্তান থেকেও নেই। সহায়-সম্পদ যা ছিল সবই প্রথম দুই স্ত্রী ও সন্তানদের লিখে দিয়ে এখন সর্বস্বান্ত তিনি। তাকে দেখার কেউ নেই। শেষ সম্বল ১২ শতক জমি দিয়েছেন মসজিদের নামে।
এই অশীতিপর রাজনীতিক বোঝা হয়ে উঠেছেন পরিবারের কাছে। তার দল বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও কোনো দায়িত্ব পালন করছে না সাবেক সাংসদের প্রতি। দল থেকে পাচ্ছেন না কোনো সহায়তা।
সাংসদ থাকাকালে তার ভূমিকা সম্পর্কে এনামুল হক জজ বলেন, ‘একজন মন্ত্রীর যোগ্যতার চেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করেছি কিছু অমানুষের ওপর। আমার কাছে সহজে ভালো মানুষ আসতে পারেনি কিছু অমানুষের কারণে। যারা আমার কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন, তাদের সহযোগিতা করেছি দুহাত ভরে। আমি বুঝতাম আমার পাশে থাকা নেতাদের অনেকেই তখন আঙুল ফুলে কলাগাছ। অনেক বড় মন্ত্রীও আমাকে দেখলে সমীহ করত। কেন করত সেটা আমি জানি। আমি গফরগাঁও উপজেলায় দুই দিনের চেষ্টায় রাষ্ট্রপতির আসার ব্যবস্থা করেছিলাম। এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের ব্যবস্থা করেছি। ক্লাব, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমি দিয়েছি দুহাত ভরে। আমাকে ব্যবহার করে অনেকে পারিবারিক সুবিধাসহ টাকার পাহাড় করেছে। দিনশেষে আমার হিসাবের খাতা শূন্য।’
স্যুট-টাই পছন্দ করতেন এনামুল হক জজ। ময়লা কাপড় কখনো ব্যবহার করেননি তিনি। সে কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘এখন হতশ্রী অবস্থা। গত ১ নভেম্বর পাঞ্জাবিটি পরেছি। আজ ১৬ নভেম্বর। ধোলাই করতে পারছি না সাবান কেনার অভাবে। আমি কখনো কারও টাকা মেরে খাইনি। এখনো অনেকের কাছে অর্ধকোটি টাকা পাই। আমাকে দেখে পালিয়ে যায় কিছু বড়লোক। আমি হাজারো কষ্টের মাঝেও হাসি। তারা আমাকে টাকা দেয় না, আজ তারা শক্তিশালী। বিশ্বাস করুন, আমার খুব কষ্টার্জিত পয়সা এরা নিয়েছে। আজ যখন ২৭০০ টাকা ভাড়ায় ছোট্ট একটি রুমে ঘুমাতে যাই, তখন মনে হয় আগের দিনগুলোর কথা।’
নিঃসঙ্গ এই সাবেক সাংসদের পাশে কেউ না থাকলেও সন্তানদের জন্য ঠিকই মন পোড়ে তার। বলেন, ‘আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আপনজন। আমার যা ছিল সব দিয়েছি। এতে আমার দুঃখ নেই। আজ ৩৩ বছর কাটছে বড় মেয়ে জয়ার মুখ দেখি না। সাথে আছে পারিসা, রামিমা দুজন। খুব ইচ্ছে করে সন্তানের প্রিয় মুখগুলো দেখতে। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি। ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঘুমতে যায় প্রতিদিন। সন্তানদের মুখগুলো বহুকাল দেখতে না পেয়ে প্রতি রাতে বুক ফেটে কান্না আসে।’
মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম না ওঠায় মনের কষ্টের কথা জানিয়ে এনামুল হক জজ অভিমানী হন। বলেন, ‘আমি দুবার এমপি ছিলাম দাবি করব না কোনো দিন। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি দাবি করব না কোনো দিন। আমার মুক্তিযুদ্ধের দরখাস্ত যারা ছুড়ে ফেলেছেন, তাদের বলছি তোমরা আমাকে দিলে না, কিন্তু এখনো কিছু অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন, অন্তত তাদের মরণের আগে কিছু করে দিও।’
একুশে সংবাদ/ঢা/এআরএম