সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

প্রবাসীর অর্থ আত্মসাৎ, আইনজীবীর কারাদণ্ড

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ৫ অক্টোবর, ২০২২

লক্ষ্মীপুরে ভূয়া মামলার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে এক প্রবাসীর কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ মামলার রায়ে লক্ষ্মীপুরে মনসুর আহম্মদ দুলাল নামে এক আইনজীবীকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড রায় দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

 

ওই মামলায় আদালত তার সহযোগী আনসার উল্যা চৌকিদার নামে আরেক প্রতারককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের সাজার রায় দিয়েছেন। তবে আইনজীবী মনছুর আহম্মদকে আপিল সাপেক্ষে এবং দুই শর্তে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। আর আনসার উল্যা জরিমানার ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে মুক্তি পেয়েছেন।

 

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুরশাত জামান এ রায় দেন। আদালতের পেশকার মো. সাইফুদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

তিনি বলেন, এটি আইনজীবীর প্রথম অপরাধ বিবেচনায় রেখে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। কারাদ-াদেশ ও জরিমানা পরবর্তী দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রবেশন হলো- তিনি দুই বছর গরিব ও অসহায়দের পক্ষে মামলায় লড়বেন। পাশাপাশি কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ভুক্তভোগীর হয়ে তাকে মামলায় লড়তে হবে।

 

মামলার বাদী নুর নবী জানিয়েছেন, আদালতে মামলা চলাকালীন তার পক্ষে কোনো আইনজীবী কাজ করেননি। তাই তিনি নিজেই মামলাটি পরিচালনা করেন। আদালত পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে এ রায় দিয়েছেন।

 

তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে এবং ওই মামলা থেকে তাদের পরিত্রান পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কৌশলে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দ-প্রাপ্ত এ দুইজন। পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত লক্ষ্মীপুর সদর থানাকে এফআইআর দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর সদর থানায় আইনজীবী মনছুর আহম্মেদ দুলাল ও চৌকিদার আনসার উল্যার বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। প্রতারণা মামলার বাদি জেলার রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে। তিনি দুবাই প্রবাসী ছিলেন।

 

দণ্ডপ্রাপ্ত আইনজীবী মনছুর আহম্মদ দুলাল একই উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের আলী আহাম্মদের ছেলে। আরেক দ-প্রাপ্ত আনসার উল্যা বামনী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদ ঢালীর ছেলে এবং বাদির প্রতিবেশী।

 

মামলার এজাহার ও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাদি নুর নবী একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। তিনি ৩০ বছর দুবাই ছিলেন। তার সংসারে স্ত্রী এবং দুই সন্তান। বড় সন্তান দুবাই প্রবাসী। ছোট ছেলে ঢাকায় লেখাপড়া করতেন। তার স্ত্রী বাড়িতে একাই থাকতো, নুর নবী তার স্ত্রীর কাছে লাখ লাখ টাকা পাঠাতো। নুর নবীর স্ত্রীর সাথে মামলার ২ নম্বর আসামী আনসার উল্যা চৌকিদারের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরী হয়। এজন্য নুর নবীর সাথে তার স্ত্রীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। নুর নবী বিদেশ থেকে দেশে এসে ৮০ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটি জমি বিক্রি করে নিজের একাউন্টে রাখে। ওই টাকা নিয়েও তার স্ত্রীর সাথে বিরোধ দেখা দেয়। তাদের বিরোধ মিমাংসা করে দেওয়ার নাম করে মামলার ২ নম্বর আসামী আনসার উল্যা তাকে আইনজীবি মনসুর আহম্মদ দুলালের কাছে নিয়ে যান। ওই আইনজীবী প্রথম দিন দেখা না করে পরেরদিন দেখা করতে বলেন।

 

পরের দিন তার সাথে দেখা করলে আইনজীবী দুলাল প্রবাসী নুর নবীকে জানান- তার ছোট ছেলের বিরুদ্ধে ঢাকার তেজগাঁও থানায় অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। ৫ লাখ টাকা দিলে সেই মামলার বিষয়টি তিনি সমাধান করে দিবেন। পরে নুর নবী ওই আইনজীবীকে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। আইনজীবী দুলাল ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি নুর নবীকে একটি রিকল দেয়, যা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে।

 

ফের আইনজীবী দুলাল বরিশাল আদালত থেকে নুর নবীর নামে একটি ডাকাতি ও হত্যার মামলা লক্ষ্মীপুর আদালতে এসেছে জানিয়ে তার কাছ থেকে আবারও ৫ লাখ টাকা দাবি করলে নুরনবী তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা দেয়। কয়েকদিন পর নুর নবীর নামে চান্দিনা থানা থেকে একটি মামলা এসেছে জানিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করলে তিনি তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দেন। এছাড়া বাড়ির একটি বাটোয়ারা মামলার রায় করিয়ে দিবে বলে আরও ৫০ হাজার টাকা নেন দুলাল।

 

বাদির অভিযোগ, বার বার কৌশলে তার কাছ থেকে মোট ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আইনজীবি দুলাল। তার সহযোগী আনসার উল্যা সে টাকার ভাগ পেয়েছেন। প্রতারণার বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে রায়পুর থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করলে নুর নবীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ও তার স্ত্রীর সাথে অপকর্মের ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দিয়ে ১৫০ টাকার অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। ওই স্ট্যাম্প ব্যবহার করে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।

 

বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাকে বিভিন্ন মামলার আসামী করার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। ২০২০ সালের ১৯ জুলাই ভূক্তভোগী নুর নবী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এর ভিত্তিতে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট সেখানে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে নুর নবীকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হলে আইনজীবী দুলাল তার উপর ক্ষিপ্ত হয়।

 

পরে নুর নবীকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয় আইনজীবী সমিতির নেতারা। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর ভূক্তভোগী নুর নবী বাদি হয়ে আইনজীবী মনসুর আহম্মদ দুলালকে প্রধান করে তার সহযোগী আনসার উল্যাকে ২য় আসামী করে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।

 

মামলাটি তদন্ত করেন সদর থানার সে সময়ের পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে তিনি ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মঙ্গলবার আদালত এ মামলার রায় দেন।

 

একুশে সংবাদ/র.ই.খা/এসএপি

আইন আদালত বিভাগের আরো খবর