বেলাল দেওয়ান: দেশের বিভিন্ন জেলায় সিআইডি পুলিশ অভিযান চালিয়ে অনলাইন গ্যাম্বেলিং সাইট lxbetbd.com পরিচালনাকারী অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসহ ৯ জন গ্রেফতার।
আজ সকাল সাড়ে এগারোটায় সিআইডি সদরদপ্তর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন,
সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের নিয়মিত মনিটরিং কালে অনলাইন প্লাটফর্ম lxbetbd.com নামক বেটিং সাইটটি নজড়ে আসে যেখানে অনলাইনে বেটিং করা হয় বা জুয়া খেলা হয়। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা অভিযান পরিচালনা করে গতকাল ১৩ নভেম্বর মেহেরপুর জেলা হতে মােঃ স্বপন মাহমুদ (২৭), মােঃ নাজমুল হক (২১), মােঃ আসলাম উদ্দিন (৩৫), মােঃ মুরশিদ আলম লিপু (২৫) চুয়াডাঙ্গা জেলা হতে মােঃ শিশির মােল্লা (২১) কক্সবাজার জেলা হতে মােঃ মাহফুজুর রহমান ( নবাব (২৬), মনিরা আক্তার মিলি (২৪) (নবাবের স্ত্রী), মোঃ সাদিক (২২), এবং মােঃ মাসুম রানা (২০) মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ।
এই সাইটটি মূলত রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়। চলমান T20 WorldCup, IPL, Big Bash, English Premier Leage ইত্যাদি খেলায় জুয়া খেলার জন্য একজন জুয়ারী মােবাইল নম্বর/ইমেইল এর মাধ্যমে এই বেটিং সাইটে বা অ্যাপসে একাউন্ট ওপেন করে সে সময়ে একাউন্টের বিপরীতে একটি e-wallet তৈরী করে ব্যালেন্স যােগ করে। ব্যালেন্স যােগ করার জন্য অনেক মাধ্যম থাকলেও তার মধ্যে ভেতর নগদ অন্যতম। এ তথ্যের ভিত্তিতে নগদ এজেন্ট সীম নামাবারসহ আসামী মােঃ স্বপন মাহমুদকে এবং নগদ এজেন্ট সীম নাম্বারসহ আসামী মােঃ মুরশিদ আলম লিপুকে মেহেরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামী মােঃ স্বপনকে
জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে বর্ণিত এজেন্ট সিম টি আসামী মােঃ আসলাম উদ্দিন এর কাছ থেকে সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল। সিম দেওয়া বাবদ সে আসলামকে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা প্রদান করত। আর এই এজেন্ট সীমে আসা টাকার লেনদেন এবং বিটুবি করার কাজে প্রতক্ষ্য সহযােগীতা করে সেখানকার নগদের এস আর, এবং ডিপাের ম্যানেজার। আসামী মােঃ মুরশিদ আলম লিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় তার বােন জামাইয়ের দোকানের একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে সে সেখানকার নগদের এস আর এবং ডিপাের ম্যানেজারের সহায়তায় এজেন্ট সীমটি সংগ্রহ পূর্বক এই জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল। তাদের দেওয়া তথ্য মতে মেহেরপুর জেলার নগদের কয়েকজন এস আর এবং সেখানকার ডিপাের ম্যানেজার তাদের এই কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। এজেন্ট এর আসামী মােঃ মাহফুজুর রহমান নবাবকে কক্সবাজার হতে গ্রেফতার করা হয় এবং তার সাথে সেখান হতে এই জুয়ার কাজে তাকে সহায়তাকারী আসামী মােঃ সাদিক, মােঃ মাসুম রানা এবং নবাবের স্ত্রী আসামী মনিরা আক্তার মিলিকে গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডি পুলিশ জানায় আসামী মােঃ মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় সে নিজে জুয়ার একটি এজেন্ট সীম চালায় এবং তার এলাকায় সে ই প্রথম যে এই কাজ করে। পরবর্তীতে তার রেফারেন্সে আরও বহু জুয়ার এজেন্ট যুক্ত হয়। সে আরও জানায় মােঃ সাদিক তার সহায়তাকারী তার এজেন্ট নম্বরে যে টাকা আসতাে তা জুয়ার ওয়েবসাইটে ডিপােজিট এবং উইথড্র করার কাজটি আসামী মােঃ সাদিক করতাে। আসামী মােঃ মাসুম রানা তার নামীয় নম্বর দিয়ে টেলিগ্রাম আইডি খুলে জুয়ার লােকজনদের সাথে যােগাযােগ করার কাজ করতাে এবং বিনিময়ে সে এজেন্ট এর কাছ থেকে কমিশন পেত। জুয়ার কাজে জড়িত থাকায় নবাব বাসা থেকে বের হতে পারতাে না বা কোথাও যেতে পারতাে না বিধায় নবাবের স্ত্রী আসামী মনিরা আক্তার মিলি টাকা সংগ্রহ, ব্যাংকে টাকা জমাসহ বাইরের সকল কাজ করতাে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা সকলেই জানায় যে, জুয়ার লেনদেনের কাছে ব্যবহৃত প্রতিটি এজেন্ট সীম ই সেখানকার নগদের এস আর এর মাধ্যমে ট্রানজেকশন করে। জুয়ার সাথে জড়িত এস আর গণ এই জুয়ার এজেন্টদের সাথে সরাসরি অবৈধ লেনদেনে জড়িত এবং এর বিনিময়ে তারা জুয়ার এজেন্টদের কাছ থেকে প্রতিটি লেনেদেনে কমিশন পেত। অনেক সময় জুয়ার এজেন্ট এবং এস আর দের মধ্যে বিটুবির মাধ্যমে লেনদেন হলেও তাদের মধ্যে ফিজিক্যাল কোন লেনদেন হতাে না। যেমন আসামী মােঃ মুরশিদ আলম লিপু গত ৭ নভেম্বর তার ব্যবহৃত এজেন্ট সিম হতে সেখানকার এস আর এর নম্বরে বিটুবির মাধ্যমে ৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা এস আর কে পাঠায় যার নগদায়ন হয়নি।
জুয়ার এজেন্টগন lxbetbd.com নামক বেটিং সাইটের সকল কার্যক্রম management.io নামক ওয়েবসাইট, Telegram ও Reddy নামক একটি অ্যাপসের মাধ্যমে করে থাকে। আসামী স্বপনের ব্যবহৃত জব্দকৃত এজেন্ট সীমতে প্রতিদিন গড়ে অনুমান ৭-৮ লক্ষ টাকা লেনদেন হতাে এবং আসামী লিপুর ব্যবহৃত জব্দকৃত এজেন্ট সীমতে প্রতিদিন গড়ে অনুমান ১০ লক্ষ টাকা লেনদেন হতাে বলে জানায় সিআইডি পুলিশ।
একুশে সংবাদ/আল-আমিন