সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্তির পথে পাহাড়ের বাঁশ শিল্প

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০২২

বাঁশ শিল্প বাঙালি জাতির সংস্কৃতির একটি অংশ। জীবনে মরণে বাঁশ মানুষের নিত্য সঙ্গী। বাঁশ শিল্প বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পাহাড়ের বাঁশ শিল্প।

 

প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি, উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিক পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় মাটিরাঙ্গা উপজেলার বাঁশ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এখানকার বাঁশ শিল্প কারিগরদের জীবন আর যেন চলছে না।

 

বিগত কয়েক বছর ধরে বাঁশ শিল্পে চলছে চরম মন্দাবস্তা। ফলে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল লোকজন বেকার হয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছেন। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।

 

ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামের লোকেরা রাস্তার ধারে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে বাঁশের চটা দিয়ে চাটায়, কুলা, ডালা, চাঙ্গারী, চালান, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি, মোড়া, ঝাকা, মুরগীর খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরির কাজ করে। গৃহিনীরাও রান্না-বান্না ও ঘরের কাজ শেষে এসব তৈরিতে যোগ দেয়। তৈরি সামগ্রী গ্রামে গ্রামে ফেরি ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে।

 

বিক্রিত টাকায় তাদের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ সাংসারিক জীবন ভালোই চলতো। কিন্তু বর্তমানে ক্রেতার অভাবে আর এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এখন যেন তাদের জীবন আর চলছে না।

 

এদিকে মাটিরাঙ্গার ব্যাবসায়ী মো. আব্দুল করিম বলেন, এক সময় প্রতিটি বাড়িতেই বাঁশের তৈরি এসব জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। বর্তমান প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র এসব পণ্যের স্থান দখল করে নিয়েছে। দামও কম। ফলে প্লাস্টিকের তৈরি এসব জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ কুটির শিল্পটি। ক্রেতার অভাব আর এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে কুটির শিল্পীরা তাদের পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

 

বর্তমানে সে ধরনের একটি বাঁশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। কিন্তু সে অনুপাতে বাঁশের তৈরি এসব পণ্যের মূল্য বাড়েনি। আগে উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই বড় বড় বাঁশের ঝাড় দেখা যেত। বর্তমানে বাঁশঝাড় তেমন আর চোখে পড়ে না। যার ফলে বিলুপ্তির পথে রয়েছে আগেকার গ্রাম বাংলার পুরনো বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার।

 

মাটিরাঙ্গা হাতিয়া পাড়া এলাকার বাঁশ শিল্প কারিগর মো. কামাল মিয়া, আয়মন আক্তার, জরিনা বেগম প্রমুখ জানান, আমরা এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রগুলোর চাহিদা হলেও আমরা অর্থের অভাবে তা গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। কোনোমতে আমরা বাপদাদার পেশা ধরে রাখার জন্য সবাই মিলে এ কাজ করছি। তারা বাঁশ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার ঋণ সহযোগীতারসহ আর্থিক সাহায্য কামনা করেছেন। তারা মনে করেন, এ শিল্প সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অর্থনৈতিক সেবা তরান্বিত করবে। কর্মসংস্থান ফিরে পাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশের অনেক বাঁশ শিল্প কারিগর।

 

আমিনা বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাহিদা কম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বাজারে অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হওয়ায় এখন আর লাভ হয় না। ফলে তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে।

 

মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বাঁশ অতি মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জিনিস। এটির ব্যবহার, প্রচলন ফিরিয়ে আনা দরকার। এটি বাঁচলে ঐতিহ্য বাঁচবে। নতুন করে বাঁশের চাষ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের হতাশ না হয়ে বাঁশ শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে।

 

একুশে সংবাদ/পলাশ

ফিচার বিভাগের আরো খবর