সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ধীর গতিতে চলছে ভ্যাট মেশিন স্থাপন,হতাশায় ব্যবসায়ীরা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ২৩ আগস্ট, ২০২১

এই বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ছয় হাজার দোকানে বসবে ভ্যাট মেশিন। বছরের শেষ নাগাদ ১০ হাজার ছোট-বড় দোকান পাবে ইএফডি। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি দোকানে যাবে এই যন্ত্রটি। দুই বছর আগে ভ্যাট আহরণ বাড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর পরিকল্পনা নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

যে কোন কারণেই হোক মন্থর গতিতে চলছে ইএফডি বসানোর কার্যক্রম। ‘ঝামেলা এড়াতে’ ব্যবসায়ীরা দ্রুত মেশিনটি বসানোর অনুরোধ করলেও তাতে কোনো ফল মিলছে না ব্যবসায়ীদের।

রাজস্ব বোর্ড এতো দিনে মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি ইএফডি মেশিন আনতে পেরেছে। যেখানে ইএফডি মেশিন দরকার কমপক্ষে ৩০ লাখের বেশী। ভ্যাট দেবে কাস্টমার, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। রাজস্ব বোর্ড ইএফডি মেশিন দেবে, আমরা ভ্যাট সংগ্রহ করবো এমনটাই বলছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

রাজস্ব বোর্ডের সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার ৩৯৩টি ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার (জুলাইয়ের মধ্যে) ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলে জানায়।

এই নিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, রাজস্ব বোর্ড এতোদিনে মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি ইএফডি মেশিন আনতে পেরেছে। যেখানে ইএফডি মেশিন দরকার কমপক্ষে ৩০ লাখ। ভ্যাট দেবে কাস্টমার, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। রাজস্ব বোর্ড ইএফডি মেশিন দেবে, আমরা ভ্যাট সংগ্রহ করবো।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ভ্যাট আইন চালুর আগে প্রথম দফায় এক লাখ ইএফডি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আইনটি চালুর প্রথম এক বছরে ইএফডি আমদানি করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড। ২০১৯ সালের নভেম্বরে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় মেশিন আমদানির বিষয়টি আটকে যায়।

এর পরের বছরের এপ্রিলে চীন থেকে ১০০টি মেশিন আসে। তা ইনস্টল ও রক্ষণাবেক্ষণে চীনা প্রকৌশলী আসার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে তারা আসেননি দেশে। এরপর আরও কিছু মেশিন আসে। তা দিয়ে আগস্টে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও চট্টগ্রামের কিছু দোকানে ইএফডি বসায় এনবিআর।

এই পর্যন্ত প্রায় চার হাজার দোকানে ইএফডি যন্ত্র বসানো সম্ভব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব দোকানে বসানো হবে। চলতি অর্থবছর আরও ছয় হাজার ইএফডি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সব দোকানে বসাতে কতদিন লাগবে তা বলা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।

কিছু দোকানে ইএফডি বসানো এবং কিছু দোকানে না বসানোর কারণে তদারকিতে ঝামেলা তৈরি হয়েছে রাজস্ব বোর্ডের। এতে ঝামেলায় পড়েছেন দোকান মালিকরাও।

মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, কিছু দোকানে মেশিন বসানো হয়েছে, কিছু দোকানে নেই। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। সর্বশেষ আমরা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বলেছিলাম। প্রথমে কথা ছিল এনবিআর আমাদের ইএফডি ফ্রি দেবে। কিন্তু যদি কিনে নিতে হয় তাতেও আমরা রাজি। মেশিন তো এনে দিতে হবে। বৈঠকে আমরা উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেছি, যতদিন মেশিন না দিতে পারে, ততদিন যেন দোকানে গিয়ে ঝামেলা না করে।

তনা আরও বলেন, আমরা বারবার বলেছি, সব দোকানে ইএফডি মেশিন বসিয়ে দিন। যদি তা না পারে তাহলে সেক্টর অনুযায়ী দেয়ার জন্য বলেছি। মানে এখন যতগুলো আছে, সেগুলো একটা সেক্টরে দেয়া যেতে পারে। শুধু জুতার দোকান বা খাবারের দোকান, এভাবে দিতে পারে।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইএফডি নামের আধুনিক যন্ত্রটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। ইএফডির মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনের লেনদেনের প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এজন্য রাজস্ব বোর্ডে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সার্ভার বসানো হয়েছে বলে জানায় রাজস্ব বোর্ড।


জানা গেছে, শুল্কমুক্তভাবে চীন থেকে আমদানি করা প্রতিটি মেশিনের দাম পড়েছে ২২ হাজার টাকা। এসব মেশিন আনতে চীনের ‌‌‍‌এসজেডজেডটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মেশিন ইনস্টলেশনের বিষয়ে কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

মেশিন বসানোর অগ্রগতি ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলেও এসজেডজেডটির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

এছাড়াও মেশিনটি নিয়ে কাজ করে রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগ। গত বছর এক আদেশে হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান, পোশাক, বিপণি-বিতান, শপিংমল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপারশপ, ফার্নিচারের দোকান, জুয়েলারিসহ ২৫ খাতে এ মেশিন বাধ্যতামূলক করার কথা বলে রাজস্ব বোর্ড।

একুশে সংবাদ/রাফি

অর্থ-বাণিজ্য বিভাগের আরো খবর