সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পাবনার নকশাল নেতা হত্যার অন্যতম আসামিকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, ১৮ আগস্ট, ২০২১

নকশাল নেতা আবু হানিফকে হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পাবনা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার বটতলা বুধগাড়ী এলাকার বহুল আলোচিত নকশাল নেতা আবু হানিফ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এক নাম্বার আসামী মামুন হোসেন (৪০), পিতা-মৃত আনছার মন্ডল, সাং-পূর্ব বনগ্রাম, থানা-আতাইকুলা, জেলা-পাবনাকে পলাতক অবস্থায় পাবনা সদর থানাধীন জালালপুর এলাকা হতে গত ১৭ জুলাই সকাল অনুমান ১০ ঘটিকায় গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। 
 গত ২৪ নভেম্বর ২০১৭ সালে বিকাল অনুমান ৫.৩০ ঘটিকায় বগুড়া যাওয়ার কথা বলে নকশাল নেতা আবু হানিফ বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। তারপর হতে আবু হানিফের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 এমতাবস্থায় গত ২৭ নভেম্বর ২০১৭ সাল বিকাল অনুমান ৪ ঘটিকায় আতাইকুলা থানাধীন লক্ষীপুর ইউনিয়ন অন্তর্গত বটতলা বুধগাড়ী বিলের মধ্যে শরীর হতে মাথা ও বাম পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আবু হানিফের বাড়ীর লোকজন লাশটি আবু হানিফের বলে দাবী করে। এ বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিকটিমের ভাই আবু তালেব মোল্লা এজাহার দায়ের করলে আতাইকুলা থানার হত্যা মামলা নং ১১, তারিখ-২৭/১১/২০১৭ সাল। মামলার  ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। 

মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরবর্তিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশে উক্ত মামলাটি পিবিআই, পাবনা তদন্তভার  প্রাপ্ত হয়ে তদন্ত শুরু করে। 

পিবিআই এর ডিআইজি জনাব বনজ কুমার মজুমদার এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, পাবনা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী মামলাটি তদন্ত করছেন।
এ বিষয়ে পিবিআই পাবনা ইউনিট প্রধান পুলিশ সুপার জানাব ফজলে এলাহী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী বলেন, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। 

নকশাল নেতাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভিকটিম আবু হানিফকে নৃশংসভাবে শরীর হতে মাথা ও বাম পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে তারই সহযোগীরা। আসামী মামুন হোসেন এবং তার সহযোগী আসামীর (তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়) সাথে অন্তকলহের জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটে। 

মামলার ভিকটিম আবু হানিফ নকশাল নামক চরমপন্থি সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল এবং আসামী মামুন হোসেনসহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের সাথে পূর্ব থেকেই ঘনিষ্ঠতা ছিল। আসামী মামুন হোসেন তার সহযোগী অন্যান্য আসামীদের সাথে যোগাযোগ করে ভিকটিম আবু হানিফকে হত্যার পরিকল্পনা করে। 

পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত মাইক্রোবাস ড্রাইভার আঃ মতিন তার গাড়ীতে করে ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী রেজাউল করিমসহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীরা ভিকটিম আবু হানিফকে হত্যার উদ্দেশ্য গত ২৪ নভেম্বর ২০১৭ মোবাইল ফোনে তার গ্রামের বাড়ী আটঘরিয়া থানাধীন চাচকিয়া গ্রাম হতে ডেকে নিয়ে গাড়ীতে উঠিয়ে আতাইকুলা থানাধীন বটতলা বুধগাড়ী বিলের কাছে নিয়ে যায়। 

উক্ত স্থানে পূর্ব থেকে অবস্থান করা আসামীগণ হাতে ধারালো চাপাতি ও হাসুয়া দিয়ে মাইক্রোবাস হতে ভিকটিম আবু হানিফকে টেনে হেঁচড়ে বের করে তাদের নিকটে থাকা ধারালো চাপাতি ও হাসুয়া দিয়ে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাথাড়ীভাবে কোপাতে কোপাতে গ্রেফতারকৃত আসামী মামুন হোসেন, রেজাউল করিম ও অপর আসামী মাইক্রোবাস ড্রাইভার আঃ মতিন এবং অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় বুধগাড়ী বিলের মধ্যে নিয়ে যায়। ধারালো চাপাতি ও হাসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ীভাবে কুপিয়ে ভিকটিম আবু হানিফের মাথার পিছনে একাধিক আঘাত করে এবং এক পর্যায়ে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এছাড়াও ভিকটিমের ডান পায়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে এবং বাম পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হাটুর নিচ হতে পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। 

অতঃপর ভিকটিম আবু হানিফের মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ গোপন করার জন্য ঘটনাস্থল বুধগাড়ী বিলের কচুরী পানার নিচে পানির মধ্যে লাশ ফেলে দিয়ে মাইক্রোবাস ড্রাইভার আঃ মতিন তার গাড়ী চালিয়ে আসামী মামুন হোসেন, রেজাউল করিমসহ অন্যান্য আসামীদের নিজ নিজ বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। ঘটনাস্থলে পূর্ব থেকে অবস্থান করা আসামীগণ তাদের মত করে তারা অন্যত্র চলে যায়।

 উল্লেখ্য যে, অত্র মামলার ঘটনায় ইতিপূর্বে গত ১৫ মার্চ আসামী রেজাউল করিম ও মাইক্রোবাস ড্রাইভার আঃ মতিনকে আতাইকুলা থানাধীন পূর্ব বনগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে তারাও হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। 

গ্রেফাতারকৃত আসামীকে গতকাল বিজ্ঞ আদালতে  সোপর্দ করা হলে আসামী মামুন হোসেন নকশাল নেতা আবু হানিফকে হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে এবং অন্যান্য আসামীদের নাম প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে অত্র মামলার ঘটনায় মোট ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ঘটনার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে ৩ জনই বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।


একুশে সংবাদ/বেলাল/আর

অপরাধ বিভাগের আরো খবর