সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:২০ পিএম, ৭ নভেম্বর, ২০২২

হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্ণফুলী নদী পড়ের দুই সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের আল্টিমেটাম দিয়েছেন “চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন” নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠন।

 

সোমবার (৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের সদরঘাটে আয়োজিত এক মানব বন্ধন অনুষ্ঠানে সংগঠনটি এ দাবী জানান।

 

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্মিলিত ভাবে এই দাবী বাস্তবায়ন না করলে আগামীতে আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী উচ্চারন করেছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সেই সাথে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে আবেদন করার সমস্ত পক্রিয়াও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত বক্তারা।

 

বাংলাদেশ নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ডক্টর মনুজর আহমেদ চৌধুরী ৭ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে দুইদিনের আন্দোলন কর্মসূচীর প্রথম দিন এই মানববন্ধন পালিত হয়। আগামী ৯ নভেম্বর বুধবার দুই শতাধিক সাম্পান নিয়ে ভোর ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চাক্তাই খালের মোহনায় নদীতে অনশন ধর্মঘট করবে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনসহ আরো পাঁচটি পরিবেশবাদী সংগঠন।

 

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য ও লেখক দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মানববন্ধন সমাবেশে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক অলিউর রহমান বলেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য জনপ্রতিনিধিরাও আমাদের সাথে রাস্তায় আন্দোলন করার কথা ছিল। কিন্তু কর্ণফুলী নদী রক্ষার কথা বলতে তাদের কোন উৎসাহ দেখা যায়নি। যে কারণে সর্বস্তরের সুশিল সমাজ এবং কর্ণফুলীর সাম্পান মাঝিরা কর্ণফুলী রক্ষার আন্দোলন করে যাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসন বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নদীর উভয় তীরের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীকে ২০০০ সালের পূর্ববর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রশাসন চাইলে একাধিক ভবন নির্মান করতে পারবে। কিন্তু একটি কর্ণফুলী নদী একটি চাক্তাই খাল সৃষ্টি করার ক্ষমতা প্রকৃতি ছাড়া আরো করো নাই। যে কারণে কর্ণফুলী নদীকে স্বমহিমায় রক্ষা করার বিকল্প নাই।

 

সাংবাদিক অলিউর রহমান আরো বলেন, ২০২০ সালের মে মাসে উচ্ছেদ করা নদীর জমি পুনঃরায় দখল করে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট আড়াই শতাধিক বনজ ঔষধি বৃক্ষ রক্ষা করা না হলে এভাবেই বার বার নদী এবং নদী তীর দখল হতেই থাকবে। এখন জনগন জেলা প্রশাসক ও বন্দর চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তারা তা শুনছেন না। কক্সবাজার জেলা প্রসাসককে ইতিমধ্যে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে জানিয়ে অলিউর রহমান বলেন, বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে জনগণের কথা না শুনলে তাদেরকেও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারন করেন তিনি।

 

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের উপদ্ষ্টো বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, কর্ণফুলী জীবন্ত সত্ত্বা হিসাবে স্বমহিমায় প্রবাহিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেশের প্রচলিত আইনও তাই বলে। কিন্তু প্রশাসনের দেখেও না দেখা নীতির কারণে ভূমি দস্যুরা দিনেদিনে নদী পার দখলে উৎসাহিত হয়ে কর্ণফুলীকে গিলে খাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৭০ লক্ষ মানুষের বর্জ্য ও পলিথিনের দূষণে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে কর্ণফুলীর। যে কারণে দেশের অন্যতম খরস্রোতা এই নদী এখন মাছ ও জলজ প্রাণী শূন্য হয়ে পড়েছে।

 

দেশের ৯২ শতাংশ অর্থনীতি সচল রাখা এই নদীর দুরাবস্থা জনগণ কিছুতেই মানবেনা, মেনে নেবেনা বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ডক্টর ইদ্রিস আলী।

 

মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে কর্ণফুলী তীরের ২১৮১ টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করার সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হলেও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। হালদা মোহনা থেকে বঙ্গোপসাগরস্থ কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত ১৬ কিঃমিঃ এলাকায় তিন হাজারের অধিক অবৈধ দখলদার কর্ণফুলী নদী  দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে।

 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাবাদী ভূমিদুস্যরা এই দখলের সাথে জড়িত বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। এইসব অসাধু চক্র প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করার কারনেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই কর্ণফুলী তার স্বাভাবিক গতি প্রবাহ হারাবে, নাব্যতা ও স্বকিয়তা হারাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

 

মানববন্ধন সমাবেশে অারো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট পরিবেশ সংগঠক ও লেখক নেছার আহমেদ খান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সিনিয়র সহ সভাপতি জাফর আহমদ, সহ সভাপতি লোকমান দয়াল, সদস্য মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট সংগঠক আরমান হায়দার, সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ প্রমুখ।

 

একুশে সংবাদ/এ.রা.প্রতি/পলাশ

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর