সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হত্যা মামলার জেরে মদনে দফায় দফায় ভাংচুর লুটপাট

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ১২ জুলাই, ২০২১

নেত্রকোনা মদন উপজেলায় কৃষক কারী মিয়া হত্যা মামলার জের ধরে শিবপাশা গ্রামে আসামি পক্ষের লোকজনের বসত ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। হত্যা মামলার পর থেকে আসামিরা বাড়িতে না থাকায় জনশূন্যতার সুযোগে বাদী পক্ষের লোকজন দফায় দফায় ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। ভাংচুর ও লুটপাটের এমন ঘটনায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে বসত ঘর ভাংচুর, লুটপাটের সময় বাধা দেওয়ায় আসামি আবুল কালাম আজাদের বোন তাসলিমা আক্তার(৩২) ও আসামি শহীদ মিয়ার স্ত্রী হাওয়া আক্তার (৪০)কে পিঠিয়ে আহত করেছে বাদী পক্ষের লোকজন। তাসলিমা আক্তার গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। 

বসত ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগের প্রেক্ষিতে (১১ জুলাই) রবিবার দুপুরে সরজমিন শিবপাশা গ্রামে গেলে দেখা যায় ঘটনাস্থলে আসামি পক্ষের ১৫/২০ টি বসত ঘর ভাংচুরের দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় কিছু লোকজন আসামি শহীদ মিয়ার বসত ঘর ভাংচুর করছেন। এর আগে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে আসামিদের বাড়ি বাদী পক্ষের ১৫/২০ জন লোকজন আসামি আবুল কালাম আজাদের বসত ঘর ভাংচুর করে। 

তাদের ঘর থেকে কৃষি যন্থপাতি পাওয়ার টিলার, সেচ মেশিন, মাড়াই কল লুটপাট করে নদী পথে নৌকা দিয়ে নিয়ে যায়। এসব মালামাল বহনকারী নৌকার মালিক উপজেলার পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের তৌহিদ মিয়া বলেন, শিবপাশা গ্রামের লাখ মিয়া ১৫ হাজার টাকায় একটি ধান মাড়াই মেশিন ও একটি পাওয়ার টিলার আমার কাছে বিক্রি করেছে। লুটপাটের মালামাল ক্রয় করে আমি ভুল করেছি।  

ওই দিন( ৬ জুলাই) শিবপাশা গ্রামের সরেজমিনে গেলে বাড়ির সামনে টহলে থাকা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মদন থানার এস আই আব্দুল মোতালিব জানান, ভাংচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বা কেহ এমন অভিযোগও করেনি। বসত ঘর ভাংচুর ও মালামাল নৌকা দিয়ে নিচ্ছেন কারা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।

আসামি পক্ষের দাবি পুুলিশকে বার বার ভাংচুর ও লুটপাটের খবর জানালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে বিষয়টি খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনা পুলিশ সুপার।  
 
আসামি পক্ষের জুয়েলসহ অনেকইে জানান, শিবপাশা গ্রামের আঃ হেকিমের ছেলে লাখ মিয়া ও মালে কদ্দুস মিয়ার ছেলে পুতুল মিয়ার নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জন প্রতিদিনেই ভাংচুর চালিয়ে ঘরের ধান,চাউল, জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা আমাদের ৩০/৩৫ টি বসত ঘর ভাংচুর করেছে। আমাদের বাড়ি থেকে ১৫টি গরু, সেচ মেশিন, মাড়াই মেশিন, পাওয়ার টিলার লুটপাট করে নিয়ে গেছে। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় দুইজন মহিলাকে পিঠিয়ে আহত করায় ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি আছে। পুলিশকে বার বার জানিয়ে ভাংচুর, লুটপাট বন্ধ করা যাচ্ছে না।

নিহতের স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, আবুল কালাম আজাদ তার দলের লোকজন নিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। ভাংচুর করতেছে এতে আপনাদের কি হয়েছে? এর সাথে পুতুল মিয়া বলেন, আমাদের লোক মারা গেছে। আমরা এসব করবোই।  

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি তদন্ত) উজ্জল কান্তি সরকার জানান, কৃষক কারী মিয়ার মৃত্যুর সংবাদে কিছু ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ঘনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

নেত্রকোনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী জানান, হত্যা মামলার পর আসামি পক্ষের লোকজদের ঘর বাড়ি ভাংচুর বা লুটপাটের বিষয়টি জেনে ব্যববস্থা নেয়া হবে।    

উল্লেখ্য গত (২২ জুন) মঙ্গলবার শিবপাশা গ্রামের কারী মিয়ার সাথে একই গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে আবুল কালাম আজাদের বাড়ির সীমানা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কারী মিয়াসহ দু-পক্ষের ৪ জন আহত হয়। এর মধ্যে কারী মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। রাতেই কারী মিয়ার ছেলে কাওসার মিয়া বাদী হয়ে আবুল কালাম আজাদসহ ৪০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

অপরদিকে আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে ওই রাতেই কারী মিয়াসহ ৩৬ জনকে আসামি করে থানায় পাল্টা মামলা করেন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (৩ জুলাই) কারী মিয়া মারা যান। কারী মিয়া মারা যাওয়ায় তার ছেলের দায়েরকৃত পূর্বের মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। 

 

 

একুশে সংবাদ/সাকের/প

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর