সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ত্রিশ বছর ধরে চুল-দাড়ি কাটে জীবিকা নির্বাহ করেন আব্দুর রশিদ

প্রকাশিত: ০৬:২২ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

আগে হাটবাজারে একটি চৌকি বসিয়েই চুল-দাড়ি কাটা, ক্ষৌরকর্মে দাড়ি কামিয়ে দিত। ধীরে ধীরে নগর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় নরসুন্দরদের কাজের ধরন। এখন হয়েছে সেলুন। এই সেলুনে যারা কাজ করে তারা নরসুন্দর। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নরসুন্দরদের দুর্দিন চলছে।

রোববার ১৮ অক্টোবর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ দিনের পেশাকে ধরে রাখতে বিভিন্ন গ্রামের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাস্তার পাশে বসে চুল-দাড়ি কেটে দিচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দুর্লবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল বাতেন মিয়ার ছেলে আব্দুর রশিদ মিয়া। এ কাজে যা আয় হয় তাতেই চলছে তার সাত সদস্যের সংসার। অন্যের চুল-দাড়ি কেটেই পাঁচ ছেলে-মেয়ের বরনপোষন সংসারের খরচও চালান আব্দুর রশিদ মিয়া। নরসুন্দর আব্দুর রশিদ মিয়া জীবনের তাগিদে জীবিকা নির্বাহে বিনা দ্বিধায় ৩০ বছর ধরে গ্রামে ঘুরে ঘুরে এবং রাস্তার পাশে বসে বাচ্ছাদের চুল ও পুরুষের চুল-দাড়ি কাটছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে যুবক, শিশু,ও বৃদ্ধদের চুল-দাড়ি কাটেন রশিদ মিয়া।

অন্যের চুল-দাড়ি কামিয়ে রশিদ মিয়া যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকম চলে তাদের সংসার। একে একে তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় তিন ছেলে দুই মেয়ে। পাঁচ ছেলে মেয়রে মধ্যে এক ছেলে প্রতিবন্ধী এক মেয়েও প্রতিবন্ধী।

পনের-ষোল বছর আগে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে তার ছেলে মেয়ে। সংসারে হাল ধরতে এবং ছেলে মেয়েদের খরচ যোগাতে প্রাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সংসারের চাকা। নিজের চিকিৎসা এবং সংসারের খরচ চালাতে না পেরে বাধ্য হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল দাড়ি কাটতে  যান। রশিদ মিয়া কখনো চিন্তাও করেননি এই বয়সে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের চুল-দাড়ি কেটে তাকে সংসার চালাতে হবে।

নিরুপায় হয়ে সিদ্ধান্ত নেন এই পেশাকেই। বাজারে বাজারে চুল-দাড়ি কাটার কাজ শুরু করলে প্রথমে বাধা বিপত্তি আসে। করোনার সময় আব্দুর রশিদ মিয়া এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি দপ্তর থেকে আর্থিক সহায়তা পাননি। 

চুল কাটতে আসা কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বাইরে যে টাকা দেবো সেই টাকাটা রশিদকেই দেই। চুল কাটা ৩০ টাকা আর সেভ করলে ২০ টাকা, রশিদ না থাকলে আমাদের উপজেলায় গিয়ে চুল ও দাড়ি কাঁটাতে হতো। এখন আমরা গ্রামে বসেই এ কাজ করাতে পারছি।

টেংরা গ্রামের যুবক রাসেল খান বলেন, আব্দুর রশিদ মিয়া, মেসি, নেইমার, রোনালদো, রক স্টাইলে চুলের কাট দিতে পারেন। এছাড়াও অন্যকোনো কাটের ছবি দেখালেও তিনি সেই ধরনের কাট দিতে পারেন। অল্প টাকায় আমাদের চুল কেটে দেন। আমরা তার কাছেই চুল কাটি।

স্থানীয় অটোচালক রুবেল হাওলাদার বলেন, আমরা রশিদ মিয়ার কাছেই চুল কাটি। তিনি আমাদের যতœসহকারে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক কাট দেন। চুলও ভালো কাটেন এবং সেভও ভালো করেন। গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই তার কাছে চুল-দাড়ি কাটে।

আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, গ্রামের বাজারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। হাটের দিন একটু কাজ বেশি হয়। আবার দুই এক দিন গ্রাহকই হয় না। তখন অবসর সময় বাজারে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে চুল-দাড়ি কেটে দেই। এতে একটু বাড়তি আয় হয়। এখান থেকে যা রোজগার হয়, তা দিয়ে পাঁচ ছেলে-মেয়ের ও সংসারের খরচ চালাচ্ছি। একার আয়ে সংসার তেমন ভালো ভাবে চলছে না। 

সেলুন মালিকরা সংসার চালাতে পারলেও আমার আর কোনো উপায় নেই মহাবিপদে আছি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে সবাইকে। কিন্তু এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে সেলুনে চুল-দাড়ি কাটার ব্যবস্থা করাত সম্ভব নয়। আবার একই কাঁচি দিয়ে চুল কাটতে হয়। সেটাও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এরকম ধারনা করে অনেকেই কাটতে চায়না।

কোনোমতে সংসার চলে। এখন কাজ বন্ধ। উপার্জন নেই। কষ্টে আছি। বাসায় বাজার নেই। হাতে যে টাকা ছিল। সেখান থেকে খরচ করেছি। কয় দিন আর চলবে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

তিনি আরও বলেন, আমার নিজের কোনো জায়গা নেই, অন্যের জমিতে কোনো রকমে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। আমাকে একটি সেলুন ও বসতঘর তৈরি করে দিলে অন্তত বাকি জীবনটা ভালোভাবে চালিয়ে নিতে পারতাম।

একুশে সংবাদ/এআরএম

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর