সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সংযমের রমজানে পণ্যে অগ্নিমূল্য, অসহায় ক্রেতারা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:৫৯ পিএম, ২২ মার্চ, ২০২৩

আর একদিন পর শুরু হবে সংযমের মাস পবিত্র রমজান। তাই সেহরি ও ইফতারের জন্য পণ্য কিনতে অনেকেই ছুটছেন বাজারে। সেখানে পণ্যের কোনো ঘাটতি না থাকলেও অগ্নিমূল্যে অসহায় ক্রেতা। অনেকেই ফিরেছেন মলিন মুখ নিয়ে। কারসাজি বন্ধে মাঠে প্রশাসন থাকলেও সুফল মিলছে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্রেতাদের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই।

 

বুধবার (২২ মার্চ) রাজধানীর কাপ্তান বাজার, রায়েরবাগবাগ,  নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারে এ চিত্র দেখা গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাজারে বাড়ানো হয়েছে পণ্যের জোগান। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-পণ্যের আমদানি ও মজুত পরিস্থিতিও চাহিদার চেয়ে বেশি। তারপরও রোজা ঘিরে কারসাজি করে দুই মাস আগেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কিছু পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের তরফ থেকে নীতি সহায়তায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাজার তদারকিতে মাঠে কাজ করছে সরকারি ১৪টি সংস্থা। তারা নিয়মিত তদারকি অভিযান পরিচালনা করছে। অনিয়ম পেলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এতসব উদ্যোগের পরও সুফল মিলছে না বাজারে। নিয়ন্ত্রণে আসছে না পণ্যের দাম।

বৃহস্পতিবার কিংবা শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হওয়ার কথা। ফলে স্বাভাবিক কারণেই ভোক্তাদের একটি বড় অংশ এখন থেকেই রমজানের বাজার শুরু করেছে। ফলে আগামী কয়েকদিন বাজারগুলোতে রোজানির্ভর পণ্য কেনার চাপ থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বাজারে ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে।

 

কাপ্তান বাজারে কথা হয়  আলী আজমের (৫০) সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারের একটি গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা। ৫০০ গ্রাম   গরুর মাংস ৩৮০ টাকায় কিনলাম। ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকা কেজি কিনেছি।

 

তিনি বলেন, প্রতিবছর প্রথম রোজায় ছেলেমেয়েদের জন্য সেহরি ও ইফতারে একটু ভালো আয়োজন করা হয়। এবারও বাজারে এসেছি। কিন্তু আধা কেজি গরুর মাংস ও একটি ব্রয়লার মুরগি কিনে টাকা শেষ পর্যায়ে। এখনো ছোলা, ডাল, চিনি কেনা বাকি। তাই একটু অঙ্ক মিলিয়ে নিচ্ছি। কত নিয়ে এসেছিলাম আর কত টাকা খরচ হলো।

 

রায়েরবাগ বাজারে পণ্য কিনতে এসেছেন গোলাম মোস্তফা ও সুরমি  দম্পতি। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বাজারে এসে মুখটা মলিন হয়ে গেছে। গত বছর যেখানে ৭৫-৮০ টাকা দিয়ে ছোলা কিনেছি, এবার ৯৫-১০০ টাকা দাম চাচ্ছে। গত বছর ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিকেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা। মসুর ডাল কিনতে কেজিতে গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা। যা গত বছর রোজার আগে ১৩০ টাকা ছিল। আর সয়াবিন তেলের দামেও আগুন। প্রতিলিটার কিনতে হয়েছে ১৮৫ টাকা। যা আগে প্রায় ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমন যদি অবস্থা হয় তাহলে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? বাজারে এক প্রকারের নৈরাজ্য চলছে, দেখার যেন কেউ নেই।

কাপ্তান বাজারে  কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুক্রবার যদি দাম বেড়ে যায় এমন শঙ্কায় আগেভাগে রমজান মাসের জন্য বাজারে এসেছি। কিন্তু দোকানে গিয়ে দাম শুনে চোখ আকাশে উঠে গেছে। ৭০ টাকা কেজির মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। বেসন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকা ছিল। ডাবলি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগেও ৪৫-৫০ টাকা ছিল। প্রতিলিটার সরিষা তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা আগে ২৭০ টাকা ছিল। এমন যদি হয় অবস্থা তাহলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু থাকে না।

 

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বেশ কিছু কারণে এবারের নিত্যপণ্যের দাম একটু বেশি। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি ও ডলারের দাম বাড়তি, আমদানি পণ্যে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। এ কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা করার প্রবণতায় পণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এসব দেখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগও নিয়েছে। তবে সুফল নেই। সব মিলে এবারের রমজানে পণ্য কিনতে ক্রেতার বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে ক্রেতার একটু হলেও স্বস্তি মিলবে।

 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজানকে পুঁজি করে কেউ যাতে অতিমুনাফা করে ভোক্তাকে ঠকাতে না পারে সেজন্য সরকারের তদারকি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকি প্রয়োজনে জেলে পাঠানো হতে পারে।

 

তিনি জানান, রমজান সামনে রেখে বাজার সামাল দিতে সরকার এখন আরও সক্রিয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিংয়ে সরকারের অনেক সংস্থা মাঠে নেমেছে।  

 

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজানে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের কাছে যে মজুত আছে, তাতে কোনোভাবেই দাম বাড়বে না। যদি কেউ সুযোগ নেয় (দাম বাড়ায়), তা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর