সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

জাবিতে উদ্বেগজনক হারে কমছে অতিথি পাখি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৩৪ পিএম, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই পাখিরদের আবির্ভাবের কথা জানা যায়। তবে ধারনা করা হয়, পাখিদের স্থানান্তর শুরু হয় প্রায় ৫ কোটি বছর আগে। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষজন শীতকালে পাখিদের তাদের স্ববাসে দেখতে পেতনা। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মানুষ মনে করত, পাখিরা শীতকালটা পানির নিচে ডুব দিয়ে অথবা সরীসৃপের ন্যায় গর্তে কাটায়। পরে বিজ্ঞানীরা মানুষের ভুল ভাঙতে সক্ষম হন। পাখিরা পরিবেশগত চাপে, আরামদায়ক পরিবেশের আশায়, খাদ্যের সন্ধানে ও জিনগত নিয়মের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশান্তরী হয়।

 

বস্তুত প্রচণ্ড শীতে স্ববাসে যখন বাঁচা-মরার প্রশ্ন দেখা যায়, দেখা দেয় খাদ্য ও আশ্রয়ের চরম সঙ্কট; তখন শীতপ্রধান দেশের পাখিরা অতিথি হয়ে আসে আমাদের দেশে। একটু উষ্ণতা, আর্দ্রতা ও শ্যামলিমার আশায় হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে বাংলাদেশে। খুঁজে নেয় নির্জন স্থান, জলাশয় ও বনাঞ্চল। উড়ে বেড়ায় হাওর, বিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে।

 

এক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসও এর বাইরে নয়। শীতের শুরু থেকেই পাখির বাড়ি বা আশ্রম হিসেবে খ্যাত এ ক্যাম্পাস পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। শীতের অতিথি পাখিগুলো শুধু সৌন্দর্য বর্ধনই করে না, এটি আমাদের যথেষ্ট উপকার করে। প্রকৃতির ক্ষতিকর পোকা মাকড়, কীটপতঙ্গ, ইঁদুর খেয়ে ওরা জলজ প্রাণীর সুরক্ষা করে। কিছু পাখি প্রাণী ও উদ্ভিদের বংশ বিস্তারে সাহায্য করে। গাছের ডালে আশ্রয় নেয়া পাখিগুলো গাছের ফাঁকে থাকা পোকামাকড় ধরে খায়। ফলে গাছপালা পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা পায়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জরিপ মতে, ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখি আসে। এ সময় ৯০ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা যায়। পরবর্তীতে এ সংখ্যা ১৯৫ প্রজাতিতে বেড়ে দাঁড়ায়। যার মধ্যে ১২৬টি প্রজাতি দেশীয় এবং ৬৯টি অতিথি পাখি।

 

তবে দিন দিন উদ্বেগজনক হারে অতিথি বা পরিযায়ী পাখি আসা কমেছে জাবিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ তম আবর্তনের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মিয়া বলেন, গত তিন বছর থেকে আমি নিয়মিত ভাবেই ক্যাম্পাসে আছি। প্রত্যেক শীতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জলাশয় বিশেষত লেকগুলোতে প্রচুর অতিথি পাখি থাকলেও এ বছর বিপরীত চিত্র প্রত্যক্ষ করছি। সবচেয়ে শীতলতম মাস জানুয়ারিতে এসেও অতিথি পাখির সংখ্যা হাতেগোনা।

 

অতিথি পাখির সংখ্যা কমার জন্য সুপরিকল্পিত  আশ্রয়ের ব্যবস্থাপনা না থাকা, সচেতনতার অভাব এবং অপরিকল্পিত নগরায়নকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা।

 

পাখি গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘ ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ বসবাসের উপযোগী হওয়ায় সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পাখিরা দল বেঁধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। তবে প্রতিনিয়ত এর পরিমাণ কমছে। মূলত মানুষের পদচারণা, গাড়ির হর্ন এবং শোরগোলসহ নানাবিধ কারণে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যেটা পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত বটে। এজন্য পাখির সংখ্যা বাড়াতে তাদের জন্য সুষ্ঠ, নিরাপদ ও নিরিবিলি পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সচেতনত হওয়া উচিত।

 

এছাড়া এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষ  গাফিলতির কারণে দিন দিন অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য ক্যাম্পাসে ১০ তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে, এই ১০ তলা ভবনগুলোর কারণে পাখির ফ্লাইংটোনগুলোতে সমস্যা হচ্ছে। অপরদিকে কর্তৃপক্ষের অসচেতনতায় লেকগুলো কচুরিপানায় ভরে গেছে।

 

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সুয়ারেজ সিস্টেম রয়েছে, তাতে সুনির্দিষ্ট কোনো সিস্টেম না থাকার ফলে এখানে যতগুলো সুয়ারেজ আছে তার সবগুলোই পড়ছে লেকে। ফলে এখানে আসা পাখিগুলোর জন্য পানি, তাদের বসবাসের জায়গা মানসম্মত থাকছে না।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর