সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

“মহালয়া এক অনন্য অনুভূতি”

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মহালয়া শব্দের অর্থ মহান আলয়, অর্থাৎ মহান আশ্রয়। আবার মহালয়ার অর্থ হিসেবে পিতৃলোককে বুঝায়। এ জগতে স্বর্গতঃ পিতৃ পুরুষেরা যেখানে থাকেন বলে বিশ্বাস। মূলত পিতৃলোককে স্মরণ করার অনুষ্ঠানেই মহালয়া নামে পরিচিত।

 

পিতৃপক্ষের শেষ হবার পর অমাবস্যার অবসান হলে দেবীপক্ষের শুরু হয়। সেই লগ্ন টিতে আমরা মহালয়া বলে থাকি। এ জন্য মহালয়া স্ত্রীকারান্ত। আমাদের ত্রিভুবনে দেবী দুর্গাই হলেন মহান আশ্রয়। তার আগমনের লগ্নই মহালয়া।

 

মহালয়া হল পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিক্ষণ। আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের শেষ ও দেবিপক্ষের শুরুতে যে অমাবস্যা আসে তাকে মহালয়া বলে অভিহিত করা হয়। আর মহালয়ার এই দিনে একসাথে পিতৃপূজা ও মাতৃ পূজা দুই-ই  হয়ে থাকে।

 

সুতরাং মানব জীবনে, মানব মননে এই দিনটি এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মহালয়ার দিন থেকেই দুর্গাপূজা দিন গোনা শুরু হয়ে যায়। মহালয়ার ছয় দিন পরেই আসে মহাসপ্তমী।

 

এই নিয়ে একটি সুন্দর গল্প রয়েছে। ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন। লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের অভিলাষ নিয়ে। শরতের পূজাকে দেবীর অকালবোধন বলা হয়।

 

আসল দুর্গাপূজা হলো বসন্তে। তাই এর আরেক নাম বাসন্তী পূজা। সুরত রাজা নামে এক লোক এই পূজাটি করেছিল বসন্তকালে। কোন শুভ কাজ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বজসহ সমগ্র জীবজগতে জন্য তর্পণ করতে হয়। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান করতে হয়।

 

পুরানে বলা আছে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করার দায়িত্ব পান। ব্রহ্মার বর পাপ্ত কোন মানুষ বা কোন দেবতার পক্ষে মহিষাসূরকে বধ করা সম্ভব ছিল না। মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবতারা স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন। পাষণ্ড এই মহিষাসুর এক পর্যায়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিশ্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু ব্রক্ষা, বিষ্ণু, শিব এই ত্রি দেবতা তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পূর্ণ হতে দেন নি।

 

এই ত্রিদেবতা বাধ্য হয়ে মহামায়া রূপে অমোঘ নারী সৃষ্টি করলেন। নয় দিনব্যাপী ঘোরতর যুদ্ধ শেষে দেবতাদের দান করা দশটি অস্ত্রে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন। এভাবে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটলো, অপরদিকে শুভ শক্তির জয় প্রতিষ্ঠিত হলো।

 

যুগের পর যুগ এই বিশ্বাস, এই ধারা বয়ে আসছে। মহালয়া যেন সেই পরিচয় বহন করে চলে। মহালয়ার এমন অনেক বর্ণনা পাওয়া যায় মহাভারতের কাহিনীতে।

 

পরিশেষে এটুকু বলতে পারি মহালয়া যেন এক বিশ্বাস,অপূর্ব অনুভূতি। বাঙালি জীবনে দুর্গা পূজা সুর লহরী বেঁধে দেয় এই মহালয়া।

 

লেখক- মিতা পোদ্দার।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি/

ধর্মচিন্তা বিভাগের আরো খবর