সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মাতৃভাষার ব্যবহার ও বাস্তবতা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভাষা একটা জাতির প্রাণ। যদি ভাষাকে মুছে ফেলা যায় তাহলে একটা জাতিকে দ্রুত ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা খুবই সহজ হয়। জাতিটি তখন তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। বাঙালি জাতির অস্তিত্ব মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেই পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই।

 

১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে বাংলার মানুষ পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর তালুবন্দি হয়। সুদূর ১ হাজার ২০০ মাইল দূরের পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সাদৃশ্য নেই বললেই চলে। আমাদের একমাত্র সাদৃশ্য ধর্ম—তাও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে শাসক শ্রেণিরা। না ছিল ভাষার মিল না ছিল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিল। তাই শুরুর থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের মায়ের ভাষা তথা পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অল্প কয়েক জন শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য পরিচালনা সহজ করার জন্য রাষ্ট্র ভাষা উর্দু করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু উর্দুও পশ্চিম পাকিস্তানের সকলের ভাষা ছিল না। মাত্র ৪.৫ শতাংশ মানুষের ভাষা ছিল। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করেন এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বক্তব্য দিয়েছিল উভয় স্থানে ছাত্রজনতা ও বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করেছিল।

 

পরে খাজা নাজিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী হলে তিনিও একই কথা বলেন। ১১ মার্চ ভাষা দিবস হিসেবে ১৯৫২ সালের পূর্ব পর্যন্ত পালিত হতো। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সালাম, বরকত, রফিক শফিউর, জব্বার আরো অনেক ভাষা শহিদের রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভাষার অধিকার আদায় করেছিলাম। ১৯৫৬ সালে ২৩ মার্চ পাকিস্তানের সংবিধানে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী।

 

আমাদের মূল আলোচনা এটা নিয়ে নয়। এই কথা এই ইতিহাস সকলের জানা। এখানে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি—আদৌ আমরা আমাদের ভাষা কতখানি চর্চা করি কিংবা ভালোবাসি। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর উর্দু অক্ষরে বাংলা লেখার যে প্রস্তাব আমরা দৃঢ়চিত্তে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম আজ ঠিক তার বিপরীতে আন্তরিক সহকারে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে বাংলা লেখা গ্রহণ করেছি। উচ্চ শিক্ষায় বাংলা অনুবাদের বই খুবই নগণ্য, বাধ্য হয়ে ইংরেজিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। ইংরেজিমাধ্যমে নেই তেমন বাংলা চর্চা। মার্কেট, নামি-দামি রেস্টুরেন্টে থেকে ছোট ছোট দোকানে পর্যন্ত নামগুলো ইংরেজি লেখা হয়। ভাষার মাস এলে কোনো কোনো জায়গায় অভিযান চলে। ভাষার মাস চলে গেলে আবার যে লাউ সে-ই কদু! সুন্দর উচ্চারণে ইংরেজি বলতে পারলে এখন সেটা একটা কোয়ালিটি হিসেবে ধরা হয় কিন্তু শুদ্ধ বাংলা বলতে পারলে কেন নয়?

 

ইংরেজি সঠিক উচ্চারণ নিয়ে যতটুকু পাঠদান অনলাইন কিংবা অফলাইনে দেখা যায়, বাংলার ক্ষেত্রে তার আংশিক লক্ষণীয় মাত্র। রাষ্ট্র থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বাংলার চেয়ে ইংরেজির আধিপত্য বেশি। ইংরেজি জানা বা শেখা ও চর্চা করা দোষের কিছু না। কিন্তু বাংলাকে অবহেলা করে যেন না হয়। আসুন ভাষার মাসে প্রতিজ্ঞা করি বাংলাকে ভালোবাসি ও চর্চা করি বছর জুড়ে; তা হোক ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে। তখনই আমাদের ভাষা শহিদের রক্ত ও প্রাণ বিসর্জন সফল ও সার্থক হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

মতামত বিভাগের আরো খবর