সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

শেখ হাসিনা ফুফু আর দুর্দিনের কাণ্ডারি হারালো আওয়ামী লীগ

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর যে কয়েকজন নেতা/নেত্রী আওয়ামী লীগকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নামটা সবার উপরে। তাকে দলের দুর্দিনের কাণ্ডারি বলা হয়।

 

পরিবার সহ জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে তালমাতাল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। যে সময়টিতে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করা এ দেশে নিষিদ্ধ ছিল। জাতির পিতার দুই কন্যার জন্য দেশে আসা অসম্ভব ছিল। ৭৫ পরবর্তী দলের কঠিন সময়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেন সাজেদা চৌধুরী। ১৯৭৬ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মাথা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর জিয়া ও এরশাদের দীর্ঘ সামরিক ও স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলের নেতৃস্থানীয় পর্যায় থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

 

১৯৫৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। দলের সবচেয়ে কঠিন সময় ১৯৬৯-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

 

 মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ভারতে গিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।

 

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফেরার পর তিনি সার্বক্ষণিক শেখ হাসিনা পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছিলেন৷ শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কঠিন মুহূর্তগুলোতে এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। শেখ হাসিনা তাকে সব সময় ফুফু বলে শ্রদ্ধা করতেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শ্রদ্ধার জায়গায় রেখেছিলেন।

 

সাজেদা চৌধুরী ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন।

 

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফরিদপুর-২, নগরকান্দা, সালতা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম সাধারণ নির্বাচনে সাজেদা চৌধুরী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন। এরপর থেকে পর পর তিনবার জাতীয় সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পান তিনি।

 

গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালে ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দি ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন।

 

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মায়ের নাম সৈয়দা আছিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গোলাম আকবর চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি/

মতামত বিভাগের আরো খবর