সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

প্রব্রজ্যা অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০

বান্দরবানে সর্বত্র বিরাজ করছে আনন্দমুখর পরিবেশ। প্রতিনিয়ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান,বিয়ে ও নানাবিধ ক্রিয়া কর্ম অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বান্দরবানে। কবিগুরু রবীবন্দ্রনাথ বলেছিলেন "সদা থাকো আনন্দে"। বান্দরবানের মানুষ স্বভাবতই রসিক উৎফুল্ল স্বভাবের। আশেপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশ তাঁদের চরিত্রে এই সদগুণ দান করেছে। সবসময় আনন্দে মাতোয়ারা থাকতে পছন্দ করে এই এলাকার মানুষ। আনন্দের একটু সন্ধান পেলেই মৌমাছির মতো ছুটে চলে যায় সেখানে। আনন্দপ্রিয় মানুষদের আনন্দনানুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বান্দরবান পরিণত হয়েছে আনন্দযজ্ঞে। এখানে অলিতে গলিতে বিরাজ করে আনন্দ। শীতকালে সারা বাংলাদেশে নেমেছে বিয়ের ঢল কিন্তু  বান্দরবানের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রব্রজ্যা গ্রহণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান  তাঁদের আনন্দে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। আর এই নতুনত্ব বান্দরবানকে পরিণত করেছে আনন্দনিকেতনে।

প্রব্রজ্যা শব্দের অর্থ হলো সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান।প্রত্যেক বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সারাজীবনে একবার হলেও সাত দিনের জন্য প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে থাকেন। জাগতিক মোহ-মায়া,পাপ-তাপ বর্জন করে অবিদ্যা,অজ্ঞতা ও তৃষ্ণাকে ক্ষয় করে দুঃখ ও দুঃখের উৎপত্তি স্থলকে সমূলে উৎপাটন করে জীবনের গুঢ় তত্ত্বকে আত্মোপলব্ধির লক্ষ্যে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করা হয়।

লোভ,লালসা,হিংসা বিদ্বেষ পরশ্রীকাতরতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রত্যেক মানুষ চেতন অবচেতন মনে এসব নেতিবাচক গুণগুলোকে ধারণ লালন ও পালন করে থাকে। সমস্ত নেতিবাচকতাকে পরিহার করে চিত্তকে সুভাষিত পরিশীলিত ও কলুষতা মুক্ত করতেই এ অনুষ্ঠানের অবতারণা। সকল প্রকার দায়বদ্ধতা,সাংসারিক বন্ধন থেকে মুক্ত থাকেন এই সাতদিন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু বা শ্রমণ। সকল প্রকার অনৈতিক কার্যকলাপ থেকেও দূরে থাকেন।

প্রতিনিয়ত জরা,ব্যাধি,বার্ধক্য, না পাওয়ার বিষাদ বেদনা মানুষকে দুঃখের সাগরে নিপতিত করে ধ্বংসের  দিকে নিয়ে যায়। বৌদ্ধদের মতে মানব জীবন দুঃখময়। দুঃখবাদী নীতি বা দর্শনের অনুসারী হলেও বৌদ্ধ ধর্ম নৈরাশ্য বা হতাশার ধর্ম নয় বরং এটি হলো আশাবাদের ধর্ম।দুঃখের কারণ ও দুঃখ নিরোধের উপায় গুলোকে যথাযথ পালন করার মাধ্যমে নির্বাণ লাভ করাই হলো প্রত্যেক বৌদ্ধের মোক্ষম উদ্দেশ্য।

মানুষ তার মন দ্বারা পরিচালিত। ভালো-মন্দ, কুশল- অকুশল সমস্ত রকমের কাজের অনুপ্রেরণা আসে মন থেকে তাই মনকে সংযত রাখার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মে। মন পবিত্র হলে মানবিক গুণাবলি গুলো বিকশিত হবে। মানুষ মনুষ্যত্ব  বোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেনা নৈতিক জীবন যাপনের মধ্যে দিয়ে তা অর্জন করতে হয়। একজন প্রব্রজিত ভিক্ষু প্রতিনিয়ত শীল সমাধি পূরণ করার মাধ্যমে জগতের সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রী ও করুণা ভাব পোষণ করে থাকেন।

জীবন উপলব্ধিময়,ত্যাগের মহিমাকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করার জন্য বৌদ্ধরা যুগ যুগ ধরে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে আসছে।

লেখকঃ তন্ময় মারমা
শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

একুশে সংবাদ /টি/আই

মতামত বিভাগের আরো খবর