সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বিজয়ের উল্লাস, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

 

 

"স্বাধীনতা" শব্দটি প্রতিটি জাতির কাছে অতি সযত্নে লালিত একটি স্বপ্ন । সকলেই স্বপ্ন দেখে স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের। আমরা বাঙালি আমরাও আজ  স্বাধীন । আর এই স্বাধীনতার পতাকা আনতে পার করতে হয়েছে এক তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস। যেই ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় রয়েছে সংগ্রামী বাঙালির আত্মত্যাগের গল্প এবং বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরবের প্রেক্ষাপট। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে আমরা অর্জন করেছি আমাদের কাঙ্খিত বিজয় , দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর।  বাঙালির উপর অত্যাচার, নির্যাতনের ইতিহাস অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা এই দেশের মানুষ গুলো যেন মাটির মানুষ আর সেই মানুষকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

তবে বাঙালিরা দেখিয়ে দিয়েছে তাদেরকে কামান, বুলেটে প্রতিহত করা যায় না ,তারা অদম্য । ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনী  বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে । যার মাধ্যমে শেষ হয় বাঙালির রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের।  বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তাই বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদা আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

প্রতি বছর এই দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া বিজয়ের কথা।  প্রতিবছর বাংলাদেশে দিবসটি বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হয় । ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন করা হচ্ছে।

বিজয় দিবসের অন্যতম উল্লাস হলো আমরা শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়েছি । বিজয় দিবসে সারা দেশ ছেয়ে যায় লাল সবুজের সাজে । ২০২০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পালিত হবে ৪৯তম বিজয় দিবস । ৪৯ বছরে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি অনেক বেড়েছে । বিজয়ের উল্লাস এর সাথে সাথে সেই প্রাপ্তির আনন্দ আমাদের চোখে ঝলমল করে আর জানান দেয় নিত্যনতুন প্রত্যাশার কথা।

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। যদি  বিজয়ের প্রথম বছরের বাংলাদেশ আর ৪৯ বছরে বাংলাদেশের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে উন্নয়নের হারটা আমরা উপলব্ধি করতে পারব।  সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে । সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে খুব বেশি অগ্রসর লক্ষ করা না গেলেও এগিয়ে চলছে ধাপে ধাপে । বাংলাদেশের ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা লক্ষ করছে পুরো বিশ্ব।  শুধুমাত্র বড় বড় প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন নয় , এ দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা আজ  উচ্চারিত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী , ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে । যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমীক্ষায় বলেছে,  ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশসহ "নেক্সট ইলেভেন" সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে । অর্থনৈতিক, সামাজিক ,রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা কে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।

তবু কিছু প্রশ্ন যেন অপ্রাপ্তি হয়ে থেকে যায় আমাদের কাছে।  সোনার বাংলা কতটা সার্বজনীন সোনার বাংলাদেশ হতে পেরেছে?  তবে আমরা যদি স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখব আমাদের দেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে।  সেইসাথে আর্থসামাজিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।  তবে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্খিত  উন্নয়ন এখনো বাকি।

দেশের মধ্যে বিরাজমান অরাজকতা ,দুর্নীতি ,রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অপরাধপ্রবণতা  এগুলো প্রতিনিয়ত সোনার বাংলাদেশকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলছে। বিজয়ের আনন্দ কে প্রতিহত করছে। যে ত্যাগের বিনিময়ে বিজয় অর্জন করেছি সেই ত্যাগের মহিমা কে লালন করে কাঙ্খিত সফলতাকে অর্জন করতে হবে। আগামী দিনের এই আশা নিয়ে বিজয়ের উল্লাস আরো দ্বিগুন হয়ে ওঠে।  দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের প্রত্যেক নাগরিককে স্বীয় দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে হবে।  বিজয়ের রঙ ছেয়ে যাক সকল বাঙ্গালীর মাঝে , সেই সাথে সকলের কাছে সমাদৃত হোক সোনার বাংলার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ।

লেখক: ফারিয়া ইয়াসমিন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

একুশে সংবাদ/টি/আই

মতামত বিভাগের আরো খবর