সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:২৯ পিএম, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সহসাই প্রত্যাহার হচ্ছে না। বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে এই কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত ও সরকারের লবিস্ট নিয়োগের প্রসঙ্গ নিয়ে এই বিবৃতি দেন।

এই সময় কে আব্দুল মোমেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। প্রসেস কালকেই হবে না, সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছতে পারব, আমার বিশ্বাস র‌্যাবের মতো একটি ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।

মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার র‌্যাবের এবং এর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অপপ্রচারের কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন লবিস্ট প্রতিষ্ঠান, আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনা প্রকাশ করেনি, সেই সঙ্গে পৃথিবীর বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে তাদেরকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করেছে- যে ‘র‌্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, র‌্যাব জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের এ রকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠান- যেটা দেশের সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে, মানব পাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পলিসি হচ্ছে মানব পাচার ও মাদক কমানো। র‌্যাব এই কাজগুলোই করে। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা এই কাজ করছে। সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের ভুল তথ্য দিয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের র‌্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, যার জন্য তারা টেরোরিস্ট অর্গানাইশেন হিসেবে বিবেচিত হবে। বরং টেরোরিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র‌্যাবের কারণেই হোলি আর্টিজানের পর থেকেই... স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে- বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হোলি আর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশ এ রকম দেশ যেখানে খুব উত্তপ্ত ছিল, সেখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে।’


তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অবহিত করেছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাকে জানান। জানার পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করি। আমার আলাপ অত্যন্ত পজিটিভ ছিল। এসব সমস্যা দূর করার জন্য যদি কোনো অভিযোগ থাকে তা নিরসনের জন্য আমাদের নম্বরস অব ডায়ালগ আছে। তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন সেগুলো তিনি করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিলে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। তাছাড়া রয়েছে ইকোনমিক পার্টনারশিপ। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। বিশ্বাস করি এই নিষেধাজ্ঞা আমরা প্রত্যাহার করাতে পারব।

শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র‌্যাবকে বাদ দিতে কতিপয় এনজিওর চিঠির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা ও অনুমান এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বলেছে- র‌্যাব বিভিন্ন রকম মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।

আব্দুল মোমেন বলেন, তাদের ভাষায় র‌্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এজন্য তারা র‌্যাবকে শান্তিরক্ষায় না নেওয়ার অনুরোধ করেছে। তারা গত নভেম্বরের ৮ তারিখে চিঠি দিয়েছেন। দুই মাস হলো জাতিসংঘ এটা পেয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, জাতিসংঘ যখনই কাউকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নেয় তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করেই কাজটি দেয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস এসব অপপ্রচার ও দুরভিসন্ধিমূলক কাজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। র‌্যাব তো একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। এই অপচেষ্টা যারা করছে, আমি বিশ্বাস করি তারাই এজন্য দুঃখিত হবেন। এ রকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের জন্য যারা উদ্যোগ নিয়েছে তারা লজ্জিত হবেন।

এ সময় দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানের কাছে প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তারা বাংলাদেশে সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এও বলেছেন বাংলাদেশের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে।

এই দেশ আপনার আমার সবার জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দলের বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ-অনুযোগ করতে পারেন। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের অপপ্রচার করেন তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই। শেম অন দেম। দলের কর্মীরা যারা মাঠে-ময়দানে কাজ করে তারা এসব ‍শুনলে আপনাদের নেতৃত্বেকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। বলবে এ রকম অপকর্ম থেকে দূরে থাকুন। আমি সেদিনের প্রতীক্ষায় আছি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

একুশে সংবাদ/রাফি

জাতীয় বিভাগের আরো খবর