সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

প্রাচীন সিন্দুরমতি দিঘির ইতিকথা!

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ২০ মে, ২০২৩

কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান সিন্দুরমতি দিঘি। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরমতি গ্রামে অবস্থিত। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত এই দিঘিটির আয়তন ১৬.০৫ একর।

 

দিঘি কতটা প্রাচীন তা পাড়ের চারদিকে শত শত বছরের প্রাচীন জটাধারী বটবৃক্ষ দেখে বুঝা যায়। রয়েছে দিঘির পাড়ে গড়ে উঠা দশাধিক মন্দিরও।

 

জনশ্রুতি আছে বিশাল এই দিঘিটি খনন করেছিলেন শ্রীলঙ্কা থেকে আগত জৈনক হিন্দু জমিদার রাজ নারায়ন চক্রবর্তী।

 

জানা যায়, জমিদারের  দুই মেয়ে সিন্দুর ও মতির নামে এই দিঘির নামকরণ করা হয়।

 

তবে এই দিঘির এই নাম করনের পিছনে রয়েছে রহস্য।রয়েছে ঐ এলাকার পুর্বপুরুষদের মুখ থেকে চলে আসা রোমাঞ্চকর,রহস্যঘেরা ইতিকথা।

 

ঐ এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা সুদর্শন দেউরী তার পুর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনা ইতিকথা আমাদের জানান।

 

তিনি বলেন,  শ্রীলঙ্কা থেকে আগত জৈনক হিন্দু জমিদার রাজনারায়ণ চক্রবর্তী প্রজাদের কল্যাণের জন্য দিঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দিঘি খননের পর তাতে জল না উঠায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর এক রাতে তিনি গঙ্গা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান,তার দুই মেয়েকে দিয়ে দিঘির মাঝখানে পূজা দিতে হবে।। সে অনুযায়ী তার দুই মেয়ে সিন্দুর ও মতিকে নিয়ে দিঘির মাঝখানে পূজার ব্যবস্থা করেন। পূজা শুরুর সময় দেখা যায় কিছু উপাচার নেই। তা সংগ্রহের জন্য জমিদার আবারও উপরে উঠে আসেন। তিনি উপাচার আনতে গেলে দিঘির মাটিফেটে চারদিক দিয়ে জলে টইটম্বুর হয়ে উঠে। সকলেই পাড়ে উঠলেও সিন্দুর ও মতি অথৈ জলে ডুবে যায়।

 

এরপর জমিদার, কন্যা শোকে অসুস্থ্য হয়ে পরেন।কিন্তু তিনি আবারও স্বপ্নে দেখেন তার দুই মেয়ে দেবত্ব ও অমরত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন।জমিদার শেষবারের মত মেয়েদের দেখবার আকুতি জানান, এবং তার ইচ্ছা পুরণ হয়।

 

দিঘির মাঝখান থেকে সিন্দুর ও মতি একজন কনিষ্ঠ আঙুল আরেকজন শাড়ির আঁচল দেখানো ভঙ্গিতে  শেষ বারের মত জমিদারকে আশ্বস্ত করেন!

 

জানা যায়,তাদের দুবোনের ওই নামে মন্দির স্থাপন করা হয়।এবং ওই ভঙ্গিমাতে তাদের প্রতিমা স্থাপন ও পূজা-অর্চনা করা হয়। আরও জানা যায় সেসময় দিঘি থেকে পূজা-অর্চনার জন্য সোনার সরঞ্জাম ভেসে উঠতো।কিন্তু কোন এক পুজারীর লোভ থাকায় সেই সরঞ্জামাদি আর ভেসে উঠেনি।

 

দিঘির নাম অনুযায়ী কালক্রমে গ্রামটিও একই নাম পায়। ১৯৭৫ সালে দিঘিটি সংস্করণের  সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দিঘি থেকে প্রাচীন মূর্তি ও মুদ্রা পাওয়া যায়। যা এখন জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

 

দিঘিটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। প্রতি বছরই এই দিঘির পাড়ে রামনবমী তিথিতে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা ও মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ ভারত থেকেও অনেকে এই উৎসব দেখতে আসেন।

 

তাছাড়া বর্তমান এই দিঘির পাড়টি অসাম্প্রদায়িক চেতনার সাক্ষী। ছুটির  দিন সহ অন্যান্যদিন গুলোতে সকল ধর্মের, সকল পেশার মানুষজন সময় কাটানোর জন্য আসেন।দিঘির পাড় ঘিরে হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থান।

 

একুশে সংবাদ/স.স.প্র/জাহাঙ্গীর

ফিচার বিভাগের আরো খবর