সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মাছ ও পাখির অন্যতম অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৮:৫১ পিএম, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

চায়ের রাজ্যখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের বাইক্কা বিলটি মাছ ও পাখির অন্যতম এক অভয়াশ্রম। বাইক্কা বিলের মূল আকর্ষণ অতিথি আর স্থানীয় পাখি। চলমান শীতের মৌসুমেও পাখির কিচিরমিচির শব্দ, আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির উড়াউড়ি আর পানিতে মাছের লুকোচুরি খেলা মাতিয়ে রেখেছে বিলটিকে।

 

বাইক্কা বিলে শীতের বিকেলে হাজারও পাখির উপস্থিতি ও কলতান যে কাউকে পুলকিত করবে। শ্রীমঙ্গল সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এবং হাইল হাওরের পূর্বদিকে প্রায় ১০০ হেক্টর জলাভূমি নিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত এ বিলটিই হলো বাইক্কা বিল। বর্তমানে হাইল হাওরের প্রাণ বাইক্কা বিল। পানিতে নানা প্রজাতির পাখির জলকেলি, শাপলা আর পদ্মফুলের মেলা বিলটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। দূর থেকে পানিতে সাদা বকের এক পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে মাছ শিকার কিংবা মাছরাঙার মাছ ধরার দৃশ্য এক অনন্য সুন্দর হয়ে ধরা দেয় এখানে। বিশেষ করে শীত মৌসুমের পুরোটা সময় পাখির কলকাকলীতে মুখর থাকে চারপাশ।

 

এই বিলের উল্লেখযোগ্য পাখি পাতি চ্যাগা, পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক, রাঙ্গাবক, দলপিপি, নেউপিপি, পান মুরগি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা কাস্তেচরা, শঙ্খচিল, ভূবনচিল, বাংলা শকুন, পালাসীকুড়া ঈগল ইত্যাদি। শীত মৌসুমে অতিথি হয়ে এখানে আসে নানা জাতের পাখি। এদের মধ্যে গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা চিটি আর কালাপঙ্খ ঠেঙ্গী, ধলা বালি হাঁস, পাতিসরালী, রাজসরালী, মরচেরং ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঙ্গা হাঁস, বড়গুটি ঈগলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। এছাড়া বাইক্কা বিলে পাওয়া যায় সুস্বাদু মাখনা, শালুকসহ নানা স্বাদের, নানা বর্ণের জলজ ফল।

 

শুধু পাখি নয়, এই জলাভূমি মাছের জন্য একটি নিরাপদ অভয়াশ্রম। ‘ইউএসএইডি’র অর্থায়নে প্রকল্পের মাধ্যমে বাইক্কা বিলে গড়ে তোলা হয়েছে মাছ ও পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। বিলটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে সমন্বিত রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প আইপ্যাক।

 

বাইক্কা বিলে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় দেশের বিলুপ্তপ্রায় রুই, গনিয়া, কালিবাউস, দেশি সরপুঁটি, কানি পাবদা, ফলি, রিটা, রানী, টাকি, বোয়াল, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এখানে। অনেক প্রজাতির মাছ এখানে বংশবৃদ্ধি করে পুরো হাওরে ছড়িয়ে পড়ে।

 

এই বিল পাখি আর মাছের জন্যই শুধু নয়, অন্য অনেক প্রাণীর জন্যও একটি চমৎকার নিরাপদ আবাসস্থল। বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সেখানে তৈরি হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ টাওয়ার থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিলের পাখি কাছ থেকে দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে।

 

বাইক্কা বিলের পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের উপরে বসে সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্যটা আস্তে আস্তে টুপ করে পানির মধ্যে ডুবে যায়। বাইক্কা বিল পর্যটকদের একদম প্রকৃতির ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। একবার ঢুকে গেলে আর বের হতে ইচ্ছে করবে না কারও। যারা প্রকৃতিপ্রেমী এবং পাখির ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাদের বাইক্কা বিলে যেতেই হবে।

 

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে বাইক্কা বিলে গিয়ে দেখা যায় পাখির কলকাকলীতে বিলের চারপাশ মুখরিত। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির ওড়াওড়ি ও অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিকেলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন।

 

বাইক্কা বিলে বেড়াতে আসা পর্যটক সিলেট বাইকিং কমিউনিটির ফাউন্ডার এডমিন শহীদ জামান জানান-শীত মৌসুমে বাইক্কা বিল দেখতে অপরুপ লাগে। অতিথি পাখিদের আগমনে বাইক্কা বিল অপরূপ সৌন্দর্যে সেজেছে। তাই আমরা বাইকারদের নিয়ে প্রতি শীত মৌসুমে বাক্কা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসি।

 

বাইক্কা বিল বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিন্নত আলী বলেন, ২০০৩ সালে প্রায় ২৫০ একর আয়তনের জলাভূমিকে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রম ঘোষণা করে ভূমি মন্ত্রণালয়। তখন এখানে নিষিদ্ধ করা হয় মাছ ধরা ও জলজ উদ্ভিদ আহরণ। এরপর ধীরে ধীরে বাইক্কা বিল পাখির অভয়াশ্রম হয়ে ওঠে।

 

একুশে সংবাদ/এ.হ.প্রতি/এসএপি

ফিচার বিভাগের আরো খবর