সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে রাণীশংকৈলে হাডুডু টুর্নামেন্ট

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ৬ নভেম্বর, ২০২২

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হাডুডু। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও হাডুডু আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় স্থানীয়দের আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘হাডুডু টুর্নামেন্ট-২০২২’।

 

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ১৬টি টিমের খেলার আয়োজন করা হয় উপজেলার রাঘোবপুর মণ্ডল বাজার এলাকায়।

 

গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার রাঘোবপুর মণ্ডল বাজার এলাকার এক মাঠে মাসব্যাপী এই হাডুডু টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের দিন ও শনিবার (০৫ নভেম্বর) প্রথমপর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

 

বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই খেলা উপভোগ করার জন্য অনেক এলাকায় মাইকিং করা হয়। প্রতিটি খেলায় দর্শকসমাগমও হয় ব্যাপক। বিশেষ করে নারী ও শিশু দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে প্রতিটি খেলায়।কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন প্রায় হারিয়েই গেছে খেলাটি।

 

খেলা দেখতে আসা স্থানীয় দর্শকরা জানান, এলাকায় দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এই খেলা বন্ধ ছিল। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও উদ্যোগে আবার খেলা শুরু হওয়ায় তারা খুব আনন্দিত ও খেলাটিকে ধরে রাখার আবদেন তাদের।

 

বর্তমানে কাবাডি খেলা চালু করা হলেও হাডুডু খেলার নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণ আলাদা। আগে এই সময়ে মানুষ বেকার থাকত, বিশেষ করে গ্রামের মানুষ। তখন হাডুডু টুর্নামেন্টের আয়োজন হতো মহা ধুমধামে। গরু ও ছাগল পুরস্কার ঘোষণা করে খেলা হতো বিভিন্ন গ্রামে। দীর্ঘদিন পর হাডুডু খেলার আয়োজন হওয়ায় বেশ খুশি কয়েক গ্রামের মানুষ।

 

খেলা দেখতে আসা প্রবীণ দর্শক আব্দুল লতিফ  বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হাডুডু খেলা দেখতে পেলাম। খুব ভালো লেগেছে। আগে প্রায়ই এ খেলার আয়োজন হতো। বর্তমান প্রজন্ম এ খেলা কোনো দিন দেখেনি।’ খেলাটির আয়োজন করায় তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

 

আব্দুল্লাহ আল নোমান নামে আরেক দর্শক বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু। এই জাতীয় খেলাটিকে আবার চালু করার জন্য আয়োজদের ধন্যবাদ জানাই ও খেলাটিকে ধারাবাহিকভাবে চালু রাখার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ এখনকার গ্রামের অনেক শিশু কিশোর হাডুডু খেলা কি তা চোখেই দেখেনি। যেহেতু এটি আমাদের দেশের জাতীয় খেলা তাই খেলাটি চালু রাখা আবশ্যক।’

 

খেলাটিকে আবার চালু করতে পেরে গর্বিত ও এটিকে টিকে রাখার জন্য সরকারসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হোসেন।

 

খেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এলাকাবাসীকে আনন্দ দিতে ও খেলাটিকে ধরে রাখার জন্য এই হাডুডু টুর্নামেন্টের আয়োজন করার উদ্দ্যেশ্য।’

 

এছাড়াও খেলায় মোট ১৬টি টিম ও প্রতিটি দলে ৭ জন করে দুই দলে মোট ১৪ জন স্থানীয় খেলোয়ার অশংগ্রহণ করছে। এদের মধ্যে বিজয়ী প্রথম টিমকে ৩২ ইঞ্চি রঙ্গীন টেলিভিশন ও দ্বিতীয় পুরস্কার ২৪ ইঞ্চি টেলিভিশন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

 

রাণীশংকৈল রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘চর্চা ও তথাকথিত আধুনিকতর কারনে হারিয়ে গেছে ঐহিত্যবাহী এসব খেলা। এজন্য প্রোয়োজন সরকারি  বা বেসরকারি উদ্যোগ। তবেই ফিরে পাওয়া যাবে গ্রামীন খেলাধুলার হারানো গৌরব। গ্রামবাংলার আবহমান খেলা হাডুডু। শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় এ খেলার রেশ না থাকলেও গ্রামে কিন্ত এখনও চলে শারীরিক কসরতের এই খেলা।যাতে এখনও নিদারুণ আনন্দ উপভোগ করে দর্শকরা।’

 

একুশে সংবাদ/আ.হো.আ.প্রতি/পলাশ

ফিচার বিভাগের আরো খবর