সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বিলুপ্তপ্রায় ভেসাল জালে মাছ শিকারের দৃশ্য

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৩১ পিএম, ৫ অক্টোবর, ২০২২

আবহমান গ্রাম-বাংলার রূপের মধ্যে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ শিকারের অপরুপ দৃশ্যটি মনোমুগ্ধকর চিরচেনা। কিন্তু কালের বিবর্তনে বদলে যাওয়ায় এ ভেসাল জালে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন আর তেমন সর্বত্র চোখে পড়ে না। ‘ভেসাল জাল’ পুস্তকের কথা হলেও স্থানীয় গ্রামের ভাষায় এটি বেহাল জাল, খেয়া জাল নামে মানুষের কাছে অতি পরিচিত।

 

বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গ্রামের খাল-বিল,নদী-নালা বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে ভরে উঠে। ঠিক তখন চোখে পড়ে জেলেদের  জাল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্য।

 

তবে বর্তমানে সেই দৃশ্য  সচরাচর চোখে দেখা যায় না। এক কথায় বলা যেতে পারে এটি যেন এখন অনেকটা বিলুপ্তির দুয়ারে পৌঁছে গেছে। ভেসাল জাল ব্যবহারের মাধ্যমে একজন মাছ শিকারি খুব সহজে মাছ আহরণ করতে পারেন। এর থলি বেশ বড়। খালের ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে ভেসাল কত বড় হবে। জালের সামনের প্রান্তে খাল বা বিলের পানির গভীর ছুঁয়ে মাছকে থলিতে বন্দি করে। তখন জেলে দু’হাত দিয়ে জালে ঢুকে পড়া মাছগুলোকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারেন। যার কারণে এ জালকে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

 

মাছ শিকারের দারুণ এ কৌশল বেশি চোখে পড়বে উপকূলবর্তী এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলে। তবে উপকূলবর্তী এলাকায় জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট নদীভাঙনের কারণে অনেক খাল-নদী-নালা হারিয়ে যাওয়ায় কারণে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরার সংখ্যাটাও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।

 

ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের আবুল শিকদার বলেন, এক সময় আমরা ভেসাল জাল দিয়ে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। তবে এখন খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়া ভেসাল জাল স্থাপনের স্থান না পেয়ে অন্য পন্থা অবলম্বন করে মাছ শিকার করছি।

 

নবগ্রাম ইউনিয়নের শশিকর এলাকার ভেসাল জাল মালিক ব্রজেন হালদার বলেন, আগে ভেসাল জাল দিয়ে চিংড়ি, টেংরা, লইট্টা, পুঁটি, বাইলা, বাইমসহ নানান প্রজাতির মাছ ধরা হতো।

 

তিনি আরো বলেন, খাল-বিলে মাছ ধরার আরো অন্যান্য কৌশল থাকলেও এটি একটি স্থায়ী কৌশল।

 

ভেসাল স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার জন্য জেলেকে অন্তত ১৫-২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। জাল কেনা, ভেসাল তৈরি করার জন্য বাঁশ, রশি কিনতে হয়। তবে বর্ষা ঋতুতে জেলেরা কেবল এ ভেসাল দিয়ে মাছ ধরতে পারেন। শুষ্ক মৌসুমে খাল-বিলে পানি না থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

 

উপজেলার বয়াতিবাড়ি গ্রামের মৎস্য শিকারি ইদ্রিস আলী জানান, ভেসাল জালে আগের তুলনায় এখন মাছ খুব কম ধরা পড়ে। অপরিকল্পিত বড় বড় পুকুর খননের কারনে পানি প্রবাহে বাঁধাগ্রস্থ হওয়ায় আগের মত মাছ হয় না। এখন দিন-রাত জাল বয়ে যে মাছ ধরা হয় সেগুলো  বিক্রি করে কোন মতে সংসার চলে।

 

বয়োবৃদ্ধ  আব্দুর রহমান মিয়া(৭৫) স্মৃতিচারণ করে বলেন, গ্রামবাংলার পথঘাট দিয়ে পূর্বে হেঁটে যেতে চোখে পড়ত অনেক ভেসাল জাল। কিন্তু এখন আর তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ নদ-নদী খাল বিল ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠার ফলে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। আর খাল বিলে মাছের পরিমান কমাতে এই মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ ‘ভেসাল’ জালও এখন বিলুপ্তির পথে।

 

একুশে সংবাদ/না.হা/এসএপি

ফিচার বিভাগের আরো খবর