সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ডাকবাক্স এখন ইনবক্সে- তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ঐতিহ্য হারাচ্ছে পোস্ট অফিস

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

 

‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিওন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম। বলে ছিলে তুমি চিঠি দিও মোরে’- সেই গানের কলি বাস্তবে রূপ নিয়ে আজ গ্রাম বাংলার অতীতের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ডাক বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। সকাল থেকে ডাকে না আর ডাক হরকরা, আসে না চিঠি। যার ভেতরে লুকিয়ে থাকত অনেক অনুভূতির অনুকরণ, আনন্দের কোলাহল কিংবা চক্ষু ভেজা জলে হতাশার চাপা দীর্ঘশ্বাস। আজকাল গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র প্রযুক্তির প্রভাবে চাপা পড়েছে চিঠির অধ্যায়। শুধু সরকারি নথিপত্র পাঠানোর কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে ডাক বিভাগ।

 

নব্বই বছরের বৃদ্ধাদের সাথে পোস্ট অফিসের কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, চিঠিই ছিলো আমাদের আগের দিনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। নানা ধরনের কথোপকথন হতো এই চিঠির মাধ্যমে। আর চিঠি পত্র আদান প্রদানের সকল ব্যবস্থায় ছিলো পোস্ট অফিস নির্ভর। হাতে কলম আর টেবিলে রাখা সাদা কাগজে চেয়ারে বসে লেখা পত্রগুলো পড়ে কখনো আনন্দে মুখে হাসি ফুটত।

 

আবার কোনো চিঠি পড়ে চোখের পানিও গড়িয়ে পড়ত। কথাগুলো সবই উনিশ শতকের। প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের ডাক ছিল ‘চিঠি’। যে চিঠি আসত ডাকঘরে। আর খামেভরা কাগজের চিঠির জন্য মানুষ ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করত ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখন আসবে প্রিয়জনের চিঠি। চিঠি আসতে একটু দেরি হলে রানারের দুয়ারে ছুটত স্বজন কিংবা প্রিয়জন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য পোস্ট অফিস।

 

রামগঞ্জ উপজেলা ১ টি পৌরসভা  ও ১০টিইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।  কিন্তু আধুনিকয়তার ছোঁয়ায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে চিঠি পত্র আদান প্রদান না থাকায় বিলীনের পথে প্রায় পোস্ট অফিসগুলো। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এমন আবেগের আমেজ একটু একটু করে দূরে গেছে। ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে চিঠির জায়গা এখন মেসেঞ্জারের দখলে। তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার। এ প্রযুক্তিতে ইন্টানেটের মাধ্যমে ই-মেইল, এসএমএস ও নানাভাবে যোগাযোগের দ্রুত মাধ্যম হওয়ায় উন্নত এ প্রযুক্তির দিকে মানুষ ধাবিত হচ্ছে। চিঠি আদান-প্রদান নেই বললেই চলে। তাই এখন আর কানে আসে না ঠক ঠক শব্দ করে টিকিট লাগাতে বা সিল মারতে। ফলে সেই সময় পোস্ট অফিসের সামনে দেখা যেতো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে চিঠি আদান-প্রদান। অফিসিয়াল কিছু চিঠি পত্র ছাড়া অন্য কোনো চিঠি আদান-প্রদান হয় না বললেই চলে। যোগাযোগে আধুনিক এ প্রযুক্তির ছোয়ায় শহরের পোস্ট অফিসগুলোর কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মফস্বল পোস্ট অফিসে এর কোনো প্রভাব নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে অনেক পোস্ট অফিস।

 

রামগঞ্জ উপজেলা পোস্ট অফিসারসহ অনেক বলেন, সেই প্রাচীনকাল থেকেই চিঠির মাধ্যমে উঠে এসেছে মানুষের জীবনযাত্রার ইতিহাস। সৃষ্টিশীলতার বিকাশও ঘটতে দেখা গেছে চিঠির মধ্য দিয়ে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট যোগাযোগের দ্রুত মাধ্যম হওয়ায় মানুষ সে দিকেই ধাবিত হচ্ছে। মনের ভাব বিনিময়ের জন্য চিঠি ও পোস্ট কার্ড হরহামেশাই ব্যবহার হলেও এই প্রজন্মের অনেকেই চেনেও না এক সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগের এই পোস্ট কার্ডকে। ইতোমধ্যেই পুরনো জৌলুস হারাতে বসেছে ডাক বিভাগফলে কিছু অফিসিয়াল চিঠি পত্র ছাড়া আর কোন চিঠি পত্র আদান প্রদান নেই বললেই চলে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরাও চেষ্টা করছি গ্রাহকদের সেবা দিতে।

 

একুশে সংবাদ.কম/ছা.হ.জা.হা

ফিচার বিভাগের আরো খবর