সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

দেশসেরা বিখ্যাত বাগাটের দই, ২০০ বছরের ঐতিহ্যের স্বাদ

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ২৬ জানুয়ারি, ২০২১

বাগাট একটি গ্রামের নাম। গ্রামটি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় অবস্থিত। বাগাট গ্রামটি দইয়ের জন্য বিখ্যাত। শুধু দেশ নয়, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহিঃবিশ্বেও এর নামডাক আছে। বাগাটের দই এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশেই।

ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাগাটের দইয়ের রয়েছে শতাধিক দোকান।অনেক জায়গায় বাগাট থেকে দই প্রস্তুত করে পরিবহনের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার অনেক জায়গায় বাগাটের লোকজনই বসতি স্থাপন করে শুরু করেছে দই প্রস্তুত করা। 

বাগাটের দইয়ের এই খ্যাতি এক দিনে হয়নি। এর পেছনে আছে ইতিহাস। 

বিয়ে, অন্নপ্রাশন, মুসলমানি কিংবা অন্য যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বাগাটের দইয়ে রয়েছে ভিন্ন রকম কদর।

মাছ,মাংস,কোমড়া-পোলাও,যেমন-তেমন কিন্তু ভাই দইটা বাগাটেরই দিয়েছি, যাতে এর মান নিয়ে কোনো কথা না ওঠে। আয়োজকদের মুখ থেকে সচরাচর এ কথাটিই শোনা যায়। এ থেকেই বোঝা যায়, বাগাটের দই এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কতটা নির্ভরতা আর মর্যাদার জায়গা দখল করে আছে।  

বাগাট এলাকার ঘোষেরা (দই প্রস্তুতকারী সম্প্রদায়) কবে থেকে দই প্রস্তুত করা শুরু করেন, তার সময়কাল নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে ইতিহাস ঘেঁটে যতটা জানা যায়, এ অঞ্চলে দই প্রস্তুত শুরু হয় প্রায় ২০০ বছর আগে।

মূলত পাকিস্তান আমলে খ্যাতিমান দই বিক্রেতা নিরাপদ ঘোষের আমলে বাগাটের দই দেশজুড়ে সমাদৃত হতে শুরু করে। এ দই তখন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর থেকে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি, রাওয়ালপিন্ডিসহ বিভিন্ন শহরে যেত।নিরাপদ ঘোষের পরিবারের কেউ এখন এ ব্যবসায় নেই। 

তবে এ গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার দই তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সুনীল ঘোষই বাগাটের দইয়ের মূল রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাগাটের সুভাষ ঘোষ জানান, বাগাটের দই জনপ্রিয় হওয়ার কারণ স্বাদে ভালো, জমে ভালো এবং মিষ্টি।


বাগাটের দই প্রস্তুতির কী কৌশল,যার ফলে এই অঞ্চলে তার এত নামডাক ? এমন প্রশ্নের উত্তরে জগদীশ ঘোষ জানান, এ এলাকায় প্রচুর দুধ পাওয়া যায়। এখানে দই বানানোর জন্য দুধের ক্রিম ওঠানো হয় না।

জগদীশের মা অন্নদাবালা জানান, দই প্রস্তুত করতে কয়েকবার জ্বাল দিতে হয়। প্রথম দিন কয়েকবার জ্বাল দিয়ে দুধ রেখে দিতে হয়। পরের দিন আবার কয়েকবার জ্বাল দিয়ে তারপর দই পাতানো হয়।
নানা রকম দই এর মধ্যে মিষ্টি দই, টক দই, হালকা মিষ্টি দই ও ক্ষীরসা দই রয়েছে। বাগাটের দই গরমকালে তিন দিন এবং শীতকালে সাত দিন ফ্রিজে না রেখেই খাওয়া যায়। দই বানাতে দইয়ের বীজ খুব প্রয়োজনীয়। এই বীজ বানানোর মধ্যেই দইয়ের স্বাদ নিহিত থাকে। আড়াই কেজি বীজ দিয়ে শীতকালে আড়াই মণ ও গরমকালে পাঁচ মণ দই তৈরি করা হয়ে থাকে।

দই পাতানো নিয়ে সুনীল ঘোষের ভাগ্নে প্রদীপ ঘোষ জানান, দুধ জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করতে হয়। তারপর পরিমাণমতো তাপমাত্রায় বীজ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। কিছু সময় পর মাটির হাঁড়িতে ঢেলে আট ঘণ্টা ঢেকে রাখার পর প্রস্তুত করা হয় দই।

বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, বাগাট ইউনিয়নের ঘোষগ্রামের মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে এ দই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে সত্যচরণ ঘোষ নামের এক ব্যক্তি চারবার এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাগাটের দইকে জনপ্রিয় করার জন্য তার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। তাঁর উদ্যোগে ১৯৭৭ সালে এখানে পশু প্রজননকেন্দ্র গড়ে ওঠে।

এ কেন্দ্রের লক্ষ্য ছিল উন্নত মানের গাভি উৎপাদন এবং তা পালনে সহযোগিতা করা। বর্তমানে এ এলাকায় ছোট-বড় অর্ধশতাধিক গরুর খামার আছে। এসব খামারের দুধ দই তৈরির মূল উপকরণ বলে তিনি জানান।

বাগাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক, জেলা পরিষদের সদস্য,দেব প্রসাদ রায় জানান, বাগাটে দুই শতাধিক পরিবারের প্রায় এক হাজারের বেশি লোক এই দই বানানোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।এ দই দেশের বিভিন্ন স্থান,ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যায় এবং এর বেশ খ্যাতি রয়েছে।

দই ছাড়াও বাগাটে দুধের ছানার চমচম, মালাইকারী , ছোট চমচম, শর মালাই, দুধ মালাই, সাগর ভোগ, জাফরান লাড্ডু, ছানার পোলাউ, ¯পাউঞ্জ রসগোল্লা, কাজু সন্দেশ, ছানার আমৃত্তি, কালোজাম, শুকনা রসগোল্লা, বরফি সন্দেস,বাদাম বরফী, কাঁচা গোল্লা, প্যারা সন্দেশ, রস চমচম, মালাই রোস্ট, দই, রস মালাই সহ ত্রিশ প্রকারের খাটি দুধের উন্নতমানের মিষ্টি পাওয়া যায়।

একুশে সংবাদ/ রা.কা/এস
 

ফিচার বিভাগের আরো খবর