সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

দেশের অর্থনীতির বড় ভরসা প্রবাসীদের আয়

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৫৩ পিএম, ১৯ জুলাই, ২০২১

করোনার এই মহামারিতে সারা বিশ্বের অর্থনীতির অবস্থা অনেক ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখিন হয়েছে। এই ক্ষতি থেকে বাদ পড়েনি আমাদের দেশও। তবে কথা হচ্ছে, করোনাকালেও দেশের অর্থনীতিতে গত বছরের তুলনায় এ বছর বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমান প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রবাসীদের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সিংহভাগ প্রবাসীই দেশে তাদের উপযুক্ত কাজ না পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে ভালো কাজ করতে আর ভারো টাকা উপার্যন করতে। একটি নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য আত্মীয়-স্বজন রেখে তারা দূর-দূরান্তে জীবন ও জীবিকার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। তবে তাদের এই শ্রম জাতীয় এবং ব্যক্তিগত উভয়খাতেই বেশ অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। প্রাবসীদের পূর্বের জীবনের সাথে তুলনা করলে বর্তমানে তারা বেশ ভালো আছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বড় হচ্ছে  তাদের পাঠানো অর্থে।  সব মিলিয়ে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের পাঠানো ডলার যেন এখন অর্থনীতির বড় শক্তি হয়ে উঠেছে।

দেশে সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজেদের উদ্যোগে প্রবাসী আয় আসার পথ অনেক সহজ করেছে। এ জন্য বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক বিভিন্ন সময় কর্মী পাঠিয়ে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে। প্রবাসী আয় বিতরণে এখন ব্যাংক শাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে। ফলে বিদেশ থেকে পাঠানো আয় দ্রুততম সময়ে সরাসরি চলে যাচ্ছে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, করোনাকালে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর প্রবণতা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। প্রবাসীরা নিরাপদ লেনদেনের জন্য বৈধ পথটিকেই বেছে নিয়েছেন। আর এ কারনে দেশে রিজার্ভের পরিমানও আশানুরূপ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুয়েত প্রবাসী হামিদ আলি বলেন, 'আগে টাকা পাঠাতে অনেক ঝামেলা হতো। মাধ্যমগুলোও ঝামেলার ছিলো। ঝামেলা না পোহানোর জন্য হয় লোক মারফত আর নইলে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাঠাতাম। এখন আর আগের মতো ঝামেলা নাই। হাতের কাছেই সারি সারি এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট হয়েছে। সহজেই সেখান থেকে টাকা পাঠানো যায়। আবার ঐদিকে পরিবারের মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা তুলে ফেলতে পারে। আগে বছরের শেষে টাকা পাঠাতাম। এখন মাসের টাকা মাসেই পাঠাই।'

এছাড়াও গত এক অর্থবছরে প্রবাসীরা যে অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন, সেই অর্থে দেশে সাতটি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, পদ্মা সেতু তৈরিতে ব্যয় হবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রবাসী আয় দিয়ে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো ১০টি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে বলে দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই আয় এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১ হাজার ৮০৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এদিকে গত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে মোট আয় হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার। 

অর্থাৎ প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ রপ্তানি আয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে, হয়তো আগামী বছরের মধ্যেই রপ্তানী আয়ের মতোই প্রবাসী আয়ও হবে দেশীয় অর্থনীতিতে বড় একটি উৎস। আগামি বছর আসতে আসতে আরও বালো কিছু আশা করা যাচ্ছে । অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আরও বেশি উন্নতি হবে ।

 

একুশে সংবাদ/স.টি/বর্না

অর্থ-বাণিজ্য বিভাগের আরো খবর