সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

নদী ও খাল ভরাটে কুমিল্লায় হারিয়ে যাচ্ছে স্বল্প আয়ের উৎস নৌকা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ৩১ জুলাই, ২০২১

দক্ষিণ কুমিল্লায় অনেক নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়াতে  হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রাচীন জনপদের একমাত্র বাহন নৌকা। বিশেষ করে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায় জেলার নিম্নাঞ্চলখ্যাত দক্ষিণ কুমিল্লায়। বিশেষ করে বাণিজ্যিক খ্যাত  লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোটের অনেক নদী ও খাল ভরাট হয়ে গেছে।প্রভাবশালীরা পুল-কালভার্ট ও পানির গতিপথ বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি হয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। অন্যদিক  অবৈধভাবে জেলেরা (জাল) বসিয়ে পানির গতিপথের বাধা করতেছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, লাকসাম থেকে মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট হয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী গিয়ে মিলিত হয়েছে বেরুলা খাল। খালটি দিয়ে এক সময়ে নৌকা চলতো। সেই খালের ৮০ ভাগ দখল ও ভরাট হয়ে গেছে।  

অন্যদিকে, লাকসাম পৌরসভার দক্ষিণে বাতাবাড়িয়া ও ভাটিয়াভিটায় পুরো খাল ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এতে করে এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।  এর ফলে সেচ সংকটে পড়বে কৃষি জমি। প্রাকৃতিক মাছের উৎস নষ্ট হবে। খাল ভরাটে ধ্বংস হবে কুমিল্লা জেলার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জ উপজেলার তিন সহস্রাধিক একর কৃষি জমি।

এদিকে, লাকসামের উত্তরদা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শাখা খালগুলো ভরাট করে ধান চাষ, মাছের ঘের ও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নৌ পথ বন্ধ, জলাবদ্ধতা ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। একই অবস্থা চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটের খালগুলোর।

জানা যায়, বেরুলা খালের পাড়ে মনোহরগঞ্জের খিলা বাজার। এই বাজারে কয়েক যুগ ধরে নৌকা তৈরি ও বিক্রি করেন পাঁচজন ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে, সাফায়েত  ও আবদুর রশিদ বলেন, তারা পাঁচ বছর আগে প্রতিজনে ৫০০ নৌকা বিক্রি করতেন। তিন তক্তা, কোষা, সূচালো মাথার নৌকাসহ বিভিন্ন প্রকারের নৌকা বিক্রি করতেন। এবার ৫০টি বিক্রি করেছেন। কারণ নৌকা চলার খাল বন্ধ হয়ে গেছে। মাছের খামারে কিছু নৌকা বিক্রি করেন।  

মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১৯৭৮ সালের দিকে বেরুলা খালটি স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সংস্কার করা হয়। খালটি দিয়ে নোয়াখালী থেকে নৌকা যোগে লাকসাম, দৌলতগঞ্জ বাজারে মালামাল আনা-নেয়া করা হতো। খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষ জলাদ্ধতার কবলে পড়বে। কৃষি জমি পড়বে সেচ সংকটে।

লাকসামের প্রবীণ সাংবাদিক মজিবুর রহমান দুলাল বলেন, বেরুলা খালটি দিয়ে নোয়াখালী থেকে নৌকা যোগে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে মালামাল বহন করা হতো। দখলে এবং অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণে খালের নৌ-পথ বন্ধ হয়ে যায়। 

কৃষি সংগঠক মতিন সৈকত বলেন,দাউদকান্দির কালা ডুমুর নদে এক সময় নৌকা চলতো। সেই নদ দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সেটি পুনরুদ্ধার জরুরি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খাল ভরাট করা বেআইনী। পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষিকে বাঁচাতে নদী ও খাল রক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি সেচ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, কৃষি ও জীব বৈচিত্র্য বাঁচাতে প্রবাহমান খালের বিকল্প নেই। আমরা কিছু খাল পুনঃখনন করেছি। আরও কাজ চলমান রয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/রবিউল/প

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর