সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বিদেশি শিক্ষার্থী খরায় ভুগছে জাবি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:৪২ পিএম, ৫ আগস্ট, ২০২২

 

দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায় এক সময় তাদের ভর্তির সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য। কিন্তু বর্তমানে প্রতিবছরই বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রকাশিত ‘৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’ অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (৪টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বাতীত) মধ্যে ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৬৭ জন। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৫ জন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৮২ জন।

 

এদিকে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে, ঠিক তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি  শিক্ষার্থী ভর্তিতে পিছিয়ে পড়ছে। অথচ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাবিতে দেশের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে আসত।

 

বর্তমানে এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ (স্নাতক সম্মান) থেকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচে ১৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে জাবিতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ২ জন! তাদের একজন নেপালি এবং অন্যজন ভারতীয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিষয়ভিত্তিক পরিপূর্ণ তথ্য না থাকা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য বা গাইডলাইন ও প্রচারণা না করায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হতে আগ্রহী হচ্ছে না। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ-সুবিধার অভাব, আন্তর্জাতিক মানের আবাসন সংকট, বৃত্তির ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় জটিলতা, বিশ্ব র‍্যাংকিং এ পিছিয়ে পড়া, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অনেক বিভাগে শুধু বাংলায় পাঠদান, সেশনজটসহ নানা কারণে আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী (নেপালি) ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়। যদিও সেই শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করার পূর্বেই দেশে ফিরে গেছেন। 

২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে একজন করে বিদেশি শিক্ষার্থী ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। সর্বশেষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষেও কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি।

 

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যপক ড. শাহনাওয়াজ বলেন, ' বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে জাবি কেন পিছিয়ে পড়ছে! এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তজার্তিক মানের আবাসন সংকট বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ। এছাড়া প্রচার-প্রচারণার ব্যাপারটিও হয়ত প্রভাব ফেলতে পারে।'

 

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব ইসলাম বলেন,' বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আরো বিশ্বমানের করতে পারে। যাতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সহজে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিক ও গবেষণা কার্যক্রম সমন্ধে জানতে পারে। এছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি তাদের সময়োপযোগী বৃত্তির ব্যবস্থা করতে পারলে তারা উৎসাহী হবে বলে আমি মনে করি।'

 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলমকে ফোনে যোগাযোগের চেস্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

একুশে সংবাদ.কম/আ.র.জা.হা

ক্যাম্পাস বিভাগের আরো খবর