সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ব্ল্যাক রাইস চাষে মনজুরের সফলতা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কুমিল্লা জেলায় ব্ল্যাক রাইস (কালো রঙের চালের ধান) চাষ করে অভাবনীয় সাফল্তা লাভ করেছে মনজুর নামের এক কৃষক। ২০১৮ সালে ৫ শতক জমিতে ব্ল্যাক রাইস চাষ করেন। এতে তিনি সফল হন। পরের বছর ১০ শতক জমিতে চাষ করে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় এবার এগিয়ে এসেছেন আরো ১৫ জন কৃষক। এবার চাষ হয়েছে ১৪শ’ ৯৫ শতক জমিতে। মনজুর ব্ল্যাক রাইস চাষ করে সফল হওয়ায় পেয়েছেন কৃষি পদকও। গত বছরের ভ্যার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনজুরকে এ পদক দেন।

মনজুর বলেন, প্রতি বছরের জুলাই মাস থেকে ব্ল্যাক রাইসের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়। এখন জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে। জুলাই ৩০ তারিখ থেকে জমিতে চারা রোপণের কাজ শুরু করে নভেম্বরে প্রথম সপ্তাহে ফসল তুলা হবে। মনজুর চলতি মৌসুমে ৫০ শতক জমিতে এ ব্ল্যাক রাইস চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনাগ্রাম মাঠে এ ধানের চাষ করা হচ্ছে। এ চালের ভাত ডায়াবেটিস রোগীরা খেলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষক মনজুর হোসেন বলেন, ড. আখতার হামিদ খান ধান উৎপাদনে কুমিল্লার চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। ড. আখতার হামিদ খানের কাজ দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কালো চাল ডায়াবেটিস ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। তাই কালো চাল উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছেন। অনেকে বিদেশ থেকে উচ্চ দামে চাল কিনে খায়। ঢাকায়ও বিদেশি কোম্পানি গুলো এ চাল হাজার টাকায় কেজি বিক্রি করলেও স্থানীয় কৃষকরা তা তিনশত টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। এ চালের উৎপাদন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করছেন। এ বিষয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও কুমিল্লা ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. তৃপ্তিশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কালো চালে অ্যাস্থসায়ানিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে। হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখা, মস্তিস্কের কার্যকারিতা বাড়ানো ও শারীরিক ব্যথা নিরাময়ে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিশেষ কার্যকর বলে জানান।

মনজুর বিভিন্ন দেশের সাত প্রকার কালো চালের ধান সংগ্রহ করে চাষ করছেন। কালো চাল উৎপাদন বাড়লে কৃষিতে নতুন গতি আসবে বলে তিনি মনে করেন। মাঠে ভারতের আসাম, ইন্দোনেশিয়া, চায়না, জাপান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সাত প্রকার কালো চালের ধান লাগানো হবে। চাল কালো হলেও সব গুলো ধানের পাতার রঙ বেগুনি নয়। অনেক গুলো সবুজ রঙের।

সরেজমিনে দেখা যায়, মনজুর হোসেন তার বাড়িসংলগ্ন নিজের জমিতে এবার আমন মৌসুমে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, জাপান, চীন ও ভিয়েতনাম- এ সাতটি দেশ থেকে সংগ্রহ করা কালো চালের বেগুনী ও সবুজ পাতার ধানের চাষ  করার জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। চলতি মাসের ৩০ তারিখ থেকে চারা রোপণ কাজ শুরু করবেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও গবেষকরা বলছেন, কালো চাল দেখতে যেমন কালো, এ চালের ভাতও কালো এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। সুগন্ধিযুক্ত দামি ও স্বাস্থ্যকর এ কালো চাল সারা পৃথিবীতে খুবই সমাদৃত। মনাগ্রামের কৃষক রফিক উল্লাহ ভূঁইয়া, গৌতম দাস, বিল্লাল হোসেন বলেন, কৃষির উন্নয়নে কৃষকদের পথ দেখাচ্ছেন কৃষক মনজুর। জমিতে চারা রোপণের পর থেকে সবসময় তারা মনজুরের ব্ল্যাক রাইসের জমি দেখে আসছেন। তারা বলেন, বাজারে দেশিয় জাতের প্রতিমণ ধানের মূল্য সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে মোটামোটি লাভ হয়। তাই আগামীতে তারা কালো চালের ধানের চাষ করবেন বলে জানান।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) মো. ছালেকুর রহমান জানান, কৃষক মনজুর হোসেন সাতটি দেশে উৎপাদিত ব্ল্যাক রাইস-এর বীজ সংগ্রহ করে জমিতে চাষ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) থেকে সর্বশেষ অবমুক্ত করা নতুন জাতের ধানও তার জমিতে চাষ হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমন মৌসুমে স্বল্প পরিসরে পাঁচটি দেশের ব্ল্যাক রাইস চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ জানান, মনজুর যা করেছেন তা ব্যতিক্রম, তিনি বিজ্ঞানীদের কাজ করছেন। কালো চাল কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন, যা গম ও অন্যান্য ফলের জিআই হতে অনেক কম। ব্ল্যাক রাইসে অ্যান্থোসায়ানিন নামক একটি উপাদান আছে, এ কারণে এই ব্ল্যাক রাইস পুরোটাই কালো। আর অ্যান্থোসায়ানিন এমন একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ব্ল্যাক রাইসের বীজ কুমিল্লাসহ সারাদেশে আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একই সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

একুশে সংবাদ/ বা.স.স/ রখ

 

কৃষি বিভাগের আরো খবর