সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কালাইয়ে হাঁস পালনে সফল রেহেনা বিবি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:১৭ পিএম, ৯ আগস্ট, ২০২৩

বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে কষ্ট করে চলতে হতো। ছিল খুব অভাবী সংসার। স্বামীর সামান্য চাষের জমি ছিল, চাষাবাদ করে কোনো রকমে সংসার চলতো তাদের। ছোটবেলা থেকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবল ইচ্ছে তার হৃদয়ে লালন করত। আজ রেহেনা বিবি স্বপ্ন পূরণের আশায় হাঁস পালনে সফল হয়ে নিজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। তার চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না। তার মধ্যে ছিল দারিদ্র্যতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

 

রেহেনা বিবির বাবার বাড়ী জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে।একই জেলার কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হাতিয়র সরদারপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ১৯৯৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রেহেনা বিবি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি দুই সন্তানের জননী। বড় মেয়ে শুরাইয়া এইচএসসি পাশ করার পরে তাকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে রিয়াদ হাসান এবার জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাস করে। করোনাকালে তিনি অনলাইনে এক নারীর হাঁস পালন দেখে অনুপ্রাণিত হন। তখন তিনি হাঁসের খামার করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধান পান কেম্বল হাঁসের,শুরু করেন নতুনভাবে পথচলা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেহেনা বিবি বাড়ির পেছনে খাবারের পাতিল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু পরেই ছোট ছেলে রিয়াদ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে হাঁসগুলোকে খাবার দিতে শুরু করেন। মুহূর্তেই শুরু হয় খাবার খেতে শত শত হাঁসের প্রতিযোগিতা। স্বামীর দেওয়া টাকা ও নিজের জমানো টাকা দিয়েই ২০১৯ সালের দিকে বিভিন্ন প্রজাতির ২০০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়েই বাণিজ্যিক ভাবে হাঁস পালনের যাত্রা শুরু করেন রেহেনা বিবি। ৭ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে এক দিনের হাঁসের ২০০টি বাচ্চা ও খামার তৈরিতে ঘর নির্মাণ ও মাটি কাঁটাসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। মোট ৫৭ হাজার ২০০ টাকা খরচ করেই হাঁসের খামারের যাত্রা শুরু করেন তিনি।এখন সেই খামারে হাঁসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২শ তে।

 

হাঁসগুলোকে খাবার দেয়া শেষে রেহেনা বিবি জানান, ভোরবেলা খামারের দরজা খুললে হাঁসের ডানা ঝাঁপটানোর শব্দে কানে আঙুল দিয়ে থাকতে হয়। পুরো বাড়িতে হইচই পড়ে যায়। এ দৃশ্য দেখাও ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি আরও জানান,আমার হাঁস পালনের বিষয়টি এলাকায় অনেক পরিচিতি লাভ করেছে। এখন অনেকে ছোট করে হাঁসের খামার শুরু করেছে, আমি তাদের নানা পরামর্শ দিয়েছি। এখনও অনেকেই আসে কোনো সমস্যা হলে পরামর্শ নিতে। আমার ইচ্ছা ছিল নিজের পায়ে দাঁড়াবো। হাঁস পালনে ভাল লাগায় সংসারের ঘানি টেনেও স্বামী ও অন্যদের সহযোগিতায় ২০০টি হাঁস দিয়েই যাত্রা শুরু করি। এখন সেই হাঁসের সংখ্যা ১২শতে দাঁড়িয়েছে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।

 

রেহেনা বিবির স্বামী আব্দুর রাজ্জাক বলেন,১২শ হাঁসের বাচ্চা কিনতে খরচ হয় ৩৪ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। এরপর প্রতিদিন তাঁর খামারে তিন মণ ধান, গম বা ভুট্টা লাগে। এর বাইরে ওষুধ খরচ আছে। ওষুধ ও খাবার বাবদ প্রতিদিন ২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আড়াই থেকে তিন মাস পর্যন্ত প্রতিপালন করতে হয়। পরিণত বয়সে এক জোড়া হাঁস পাইকারি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়েও বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ থাকে।অল্প খরচে লাভও হয় দ্বিগুন। বর্তমানে হাঁসের খাবারের দাম বৃদ্ধি হওয়াতে লাভ একটু কম হচ্ছে।

 

পথিমধ্যে কথা হয় একই গ্রামের আলাউদ্দিন ঘটকের সাথে,তিনি জানান, শুরু থেকেই আমরা দেখছি এই পরিবারটি অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতো। বর্তমানে হাঁস পালন করে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক সুখে আছেন তারা।

 

আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য নাজমুস সাকিব বলেন,রেহেনা বিবির হাঁসের খামার সত্যিই অনুকরণীয়। অতীতের অভাবের সংসারে হাঁস পালন করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছে এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই দিন যাপন করছেন। তার এই সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও হাঁস খামার তৈরি হচ্ছে,দুর হবে এলাকার বেকারত্ব এ প্রত্যাশাই করছি।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী বলেন, হাতিয়র গ্রামের হাঁস খামারি রেহেনা বিবি প্রায়ই তাঁর কার্যালয়ে এসে হাঁস লালন-পালন সংক্রান্ত পরামর্শ নিয়ে থাকেন। অনেক সময়ে ফোনেও পারমর্শ গ্রহণ করেন। অনেক দিন থেকে হাঁস পালন করার কারনে এই পরিবারটি আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।খামারি হিসাবে সফলতার একটি দৃষ্টান্ত এই পরিবার।

 

একুশে সংবাদ/স.খ.প্র/জাহা

নারী ও শিশু বিভাগের আরো খবর