সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

শ্রীমঙ্গলের নয়নাভিরাম ‍‍‘হজম টিলা‍‍’ মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:১০ পিএম, ৩১ মে, ২০২৩

চায়ের রাজ্যখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা অন্যতম একটি পর্যটন নগরি। পাখির অভয়ারণ্য, হাওর, চা-বাগান আর উঁচু-নিচু টিলাবেষ্টিত সবুজ চাদরে ঢাকা শ্রীমঙ্গলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শ্রীমঙ্গল বিদ্যাবিল চা বাগানের অনিন্দ্য সুন্দর ‍‍`হজম টিলা‍‍` পর্যটকদের মাঝে শ্রীমঙ্গলের শ্রী আরও বৃদ্ধি করেছে।

 

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গা ঘেঁষে বিদ্যাবিলের হজম টিলা‍‍`র অবস্থান। যেখানে রয়েছে ছবির মতো চা-বাগান, আছে পাহাড়ি ছড়া আর লেবু-আনারস বাগান। চা-বাগানের আঁকাবাঁকা পথ, ঢেউ খেলানো সমান্তরাল রাস্তা নিমেষেই যে কারও বিষণ্ন মনে প্রশান্তির ঢেই এনে দিতে পারে।

 

বুধবার (৩১ মে) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন বিদ্যাবিলের এক পাশে রয়েছে সবুজ বনাঞ্চল। যেখানে যুগ যুগ ধরে বাস করে আসছেন খাসিয়া সম্প্রদায়। আর এসব সৌন্দর্য এক জায়গা থেকে উপলব্ধি করতে হলে যেতে হবে বিদ্যাবিলের পূর্ব সীমান্তের সবচেয়ে উঁচু টিলায়। স্থানীয় লোকজন এই টিলার নাম দিয়েছেন হজম টিলা। তাঁরা জানান, এই টিলাটি এতো ওপরে যে এখানে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য। প্রায় দুই-আড়াই কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা ঘুরে সেখানে উঠতে হয়। দুপুর বেলা খেয়ে যদি কেউ এই টিলায় ওঠেন তাহলে তাঁর আবার খেতে ইচ্ছা হয়। অর্থাৎ খাবার হজম হয়ে যায়। যে কারণেই হজম টিলা হিসেবে এটা বেশি পরিচিতি পেয়েছে। নিচ থেকে হজম টিলায় পায়ে হেঁটে উঠলে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে।

 

মোটরসাইকেল বা গাড়ি নিয়ে উঠলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগবে। হজম টিলার আশপাশের সব টিলায় চা-বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে। এটি চা-বাগানের জমি হলেও হজম টিলাতে এখনো চা-গাছ রোপণ করা সম্ভব হয়নি।

 

এ জায়গায় ওঠার পর যে কারোরই মনে হবে, তিনি যেন সবুজ বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করেছেন। হজম টিলা থেকে সকালের সূর্যোদয় এবং বিকেলের সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর। এ টিলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এসেছেন।

 

স্থানীয় চা বাগানের শ্রমিক রতন মালাকার জানান, আজকের মতো প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন।

 

বিশেষ করে ঈদ এবং শীতের শুরুতে এখানে বেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে।  নয়নাভিরাম এ টিলা দেখতে আসা ফয়সল হাসিব বলেন, ওয়াও, দেশের অন্যতম একটি সুন্দর জায়গা। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের ভেতরের এতো মনোরম জায়গা আছে। নিচ থেকে কয়েক শ ফুট উঁচু টিলায় উঠতে অনেক কষ্ট হলেও টিলার ভিউ, চা বাগানের সৌন্দর্য, পাশেই ইন্ডিয়ার বাড়ি-ঘর দেখে কষ্ট নিমেষেই ভুলে গেলাম।

 

টিলা ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর গ্রুপ ছবি, সেলফি তুলছেন শর্মা ঘোষ, সুকেন তাঁতি, সাজ্জাদ আর নাহিদ।

তারা বলেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অন্যতম একটি স্পট এই হজম টিলা। এতো উঁচু টিলা আর আশপাশের সৌন্দর্যে আমরা ভীষণ মুগ্ধ। যেকোনো দর্শনার্থী মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। এই স্পটে কেউ না আসলে প্রকৃতির প্রকৃত সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হবেনই দেশের অনিন্দ্যসুন্দর হজম টিলার আশপাশের চা বাগান, রাস্তা, দূর থেকে ভারতের লাইট, বাড়িঘর, কাটা তারের বেড়া একথায় সবকিছু যেনো অসাধারণ।

 

ভ্রমণপিপাসু মোঃ সোলেমান পাটোয়ারী বলেন, শ্রীমঙ্গলের পরতে পরতে শুধু সৌন্দর্য আর সৌন্দর্য। চা শিল্পাঞ্চলের জন্য যেমন দেশ বিদেশে বিখ্যাত তেমনি প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের জন্যও।

 

হজম টিলা শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে উঁচু একটি টিলা। মন রিফ্রেশ করার জন্য এই টিলায় আসা দরকার। আমরা বাইকাররা প্রায়ই অপরূপ সৌন্দর্যময় টিলায় প্রাণবন্ত আড্ডা আর ঘোরঘুরি করে সময় কাটাই। মাঝেমধ্যে তাবু টাঙিয়ে রাতেও থাকি। কারণ রাতের সৌন্দর্য দেখতে হলে সন্ধার পরও থাকতে হবে। চতুর্থপাশে সবুজ গাছগাছালি আর দূর থেকে ইন্ডিয়ার লাইটের চমৎকার আলোয় ঘোর অন্ধকারচ্ছন্ন টিলা আলোকময় হয়ে যায়।এসময়ের সৌন্দর্য আরও মনোমুগ্ধকর।

 

এই টিলার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিতই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন।

 

একুশে সংবাদ.কম/এ.বি.মু/বিএস

পর্যটন বিভাগের আরো খবর