সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সবুজের টানে ভ্রমণপিপাসুরা সুন্দরবনে

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

খুলনা: যান্ত্রিক জীবন যাপন আর কর্মব্যস্ততা ভুলে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা সবুজের টানে ছুটছেন সুন্দরবনে। শুক্র-শনিবার (২ ও ৩ সেপ্টেম্বর)ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে জীববৈচিত্রে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন।

মায়াবী হরিণ দেখে, বাঘ খুঁজে, বানর ও কুমিরের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা দেখে সময় কাটাচ্ছেন অনেকেই । আবার কেউ কেউ নির্জন বনের সৈকতে গোসল ও সাঁতার কেটে নির্মল আনন্দ উপভোগ করছেন।

দীর্ঘ তিন মাস পর বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর করমজল, কটকা, কচিখালী, পক্ষীর চর, ডিমের চর, তিনকোনা, হারবাড়িয়া, কোকিলমোনি, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচর ও আলোরকোলে হাজারো পর্যটক ভিড় করছেন দিন-রাতে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমিরসহ নানা স্থল ও জলজ প্রাণীর আশ্রয়স্থল এই বন। সুন্দরবনের মৎস্য প্রজনন মৌসুমের জন্য গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধের পাশাপশি পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়াও হয়।

তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবন উন্মুক্ত হওয়ায় ভ্রমণ পিপাসুদের স্বাগত জানাতে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান। আর প্রস্তুত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্পটও। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার পর্যটক সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বাড়ার আশা করছে বনবিভাগ। তাতে বাড়বে রাজস্ব। একই সঙ্গে বনজীবীরাও পাস নিয়ে ঢুকছেন সুন্দরবনে।

অপরূপ সৌন্দর্যের আঁধার বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে দর্শনার্থীদের। রোমাঞ্চকর ভয় আর শিহরণ, সঙ্গে প্রকৃতির নৈসর্গিকতা মুগ্ধ করে যে কাউকে।

করমজল, হারবাড়িয়া, দুবলা, কটকা, কচিখালী, নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী ও বনাঞ্চলের সবকটি পর্যটক স্পট দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয়ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

ছুটিতে ঢাকা থেকে সহকর্মীদের নিয়ে ঘুরতে আসা মাহমুদ হাসান নামে এক পর্যটক বলেন, সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়েছি। দেশের অন্য দর্শনীয়স্থানগুলোর চেয়ে সুন্দরবন ভ্রমন একটু আলাদা। লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকায় করে সুন্দরবন ভ্রমন করে বেশ আনন্দ পেয়েছি।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক এম নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, ৩ মাস বন্ধের পর আবারও পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করছে এখানে। পদ্মা সেতু পার হয়ে মোংলা থেকে অনেক পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করছেন।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবন খুলে দেওয়ার খবর পেয়ে পর্যটকরা পরিবার নিয়ে ছুটে আসছেন এখানে। বনে পর্যটকদের আগমন প্রতিদিনই বাড়ছে।

যেভাবে যাবেন: একদিনেই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাইলে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পারেন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ,এনা,ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস প্রতিদিন খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ফাল্গুনী পরিবহন, সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এসব বাসে পদ্মা সেতু পার হয়ে আগের তুলনায় খুব কম সময়ে খুলনায় পৌঁছানো যায়।   এছাড়া খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলায় অনেক বিলাসবহুল বাসে আসা যায়।

ট্যুর অপারেটররা বন বিভাগের কাছ থেকে ভ্রমণের অনুমতিসহ সবকিছুর দায়িত্ব নেন। খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর। ঢাকাতেও আছে। সুযোগ আছে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে সুন্দরবন দেখার। ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনিও সময় করে বেড়িয়ে যেতে পারেন সবুজে ঘেরা সুন্দরবন থেকে।

একুশে সংবাদ/ এন.বা.নি.24

পর্যটন বিভাগের আরো খবর