সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

‘দে-ছুট’ ভ্রমণ সংঘের নরসিংদী ভ্রমণ

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

গত শুক্রবার ‘দে-ছুট’ ভ্রমণ সংঘের বন্ধুরা ছুটে গিয়েছিলাম নরসিংদী। তিন মোটরবাইকে ছয়জন। চলতে চলতে শেখেরচরে চা বিরতি। এরপর বাইকে একটানে ভেলানগর। 

আগেই সেখানে হাজির ছিল আমাদের দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের শুভাকাক্ষী এসকে খালিদ। তার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় শেষে ছুটি সোনাইমুড়ী। ফাগুনের তপ্ত রোদ। সেফটি জ্যাকেট আর হেলমেটে পুরো দেহ গরমে সিদ্ধ হচ্ছিল। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। নিরাপত্তা আগে বলে কথা। ভেলানগর হতে অল্প সময়েই শিবপুরের কুন্দারপাড়া পৌঁছে যাই।
সোনাইমুড়ী পার্কের অবস্থান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই। মূল সড়ক ছেড়ে যখন সোনাইমুড়ী বিনোদন কেন্দ্রের দিকে আগাতে থাকি, তখন মনে হয় যেন কোনো বুনো পাহাড়ি পথে চলছি। মিনিট পাঁচেক চলার পরই বিনোদন কেন্দ্রের মূল ফটকে পৌঁছে যাই। পার্কিং এরিয়ায় বাইক রেখে টিলামুখী হাঁটতে থাকি। এরপর ছোট্ট একটা ট্র্যাকিং। টিলার উপরে উঠে চোখ উঠল কপালে। চারপাশে সবুজের সমারোহ। পাখির কলতান। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সোনাইমুড়ী বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্যও রয়েছে খেলার মাঠসহ নানা সরঞ্জাম। সারি সারি আম, জাম, কাঁঠাল, কাঠের গাছসহ নানা গাছের ছায়াতলে হেঁটে বেড়ানোর সুখ, মনের মাঝে এক অপার্থিব আনন্দের দোলা দেবে। বিশেষ করে লালমাটির টিলাগুলো ক্ষণিকের জন্য হলেও পার্বত্য চট্টগামের অনুভূতি এনে দেবে।

দুপুরে খালিদ ভাইয়ের বাড়িতে মেহমানদারি। তার আতিথ্যে সবাই মহাখুশী। খেয়েদেয়ে চিরাচরিত ছোট্ট একটা শব্দের ধন্যবাদ জানিয়ে ছুটি কামারগাউ গ্রামে। সল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাই সুনসান নিরিবিলি সোঁদা মাটির গন্ধযুক্ত গ্রামের মেঠোপথে। ক্ষেতের আল ধরে কিছুদূর হেঁটেই পেয়ে যাই সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত। প্রথম দেখাতেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ছোটবড় নানা আকারের ফুল। মুগ্ধ নয়নে সূর্যমুখী ক্ষেতের ভেতর দিয়ে হাঁটি। জীবনে এ প্রথম বিস্তর পরিসরে সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখা। অনুভূতিটাই অন্যরকম। সূর্যমুখী একবর্ষী ফুলগাছ। এ গাছের উচ্চতা তিন মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ফুলের বীজ থেকে তেল তৈরি হয়। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সূর্যমুখী ফুল অনেকটা সূর্যের মতো দেখতে মনে হয়। তাই এর নামকরণ সূর্যমুখী। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যাপক হারে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। সমভূমি এলাকায় শীত ও বসন্তকালে উঁচু লালমাটি এলাকায় বর্ষাকালে এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলে শীতকালীন শস্য হিসেবে চাষাবাদ করা হয়। বর্তমানে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নাটোর, যশোর, পাবনা, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ প্রভৃতি জেলায় ব্যাপক আকারে চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখী তেল অন্যান্য রান্নার তেল থেকে অধিক মানসম্পন্ন। ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার হয়, যা বনস্পতি তেল নাম পরিচিত। হূদ রোগীদের জন্য এ তেল বেশ উপকারী। সূর্যমুখী তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম। এছাড়া এ তেলে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে। সূর্যমুখী বছরের যেকোনো সময়ই চাষ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে চাষ করলে ফলন সবচেয়ে বেশি ভালো পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুলের বীজ হাঁস, মুরগির খাবার হিসেবেও ব্যবহূত হয়। দিনে দিনে এ তেলের চাহিদা বাড়তে থাকায় দেশের নানা অঞ্চলের কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। সূর্যমুখী ফুল দেখতেও বেশ চমৎকার। ফলে ইদানীং ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় বাগানগুলো মুখর থাকে।

যাবেন কীভাবে: ঢাকার গুলিস্তান থেকে ভেলানগর ও নরসিংদী নতুন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত তিশা ও মেঘালয় নামের বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া ৯০-১৫০ টাকা। ভেলানগর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সোনাইমুড়ী বিনোদন কেন্দ্রে ও বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে কামারগাঁও গ্রামে খুব সহজেই যাওয়া যাবে।

একুশে সংবাদ/স/আ

পর্যটন বিভাগের আরো খবর