সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

জেলা ও স্কুল লেভেল থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে হবে: এলিনা সুলতানা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:৪৩ পিএম, ৬ মে, ২০২৪

মেয়েদের ব্যাডমিন্টনে দেশের অন্যতম শীর্ষ তারকা এলিনা সুলতানা। জাতীয় ব্যাডমিন্টনে এককে দু‍‍`বার চ্যাম্পিয়ন তিনি। সামার ওপেন ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে এককে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন ছয়বার। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন চারবার। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক আসরেও সফলতা আছে এলিনার ঝুড়িতে। এছাড়া ইন্দো-বাংলাদেশ গেমসে এককভাবে ব্রোঞ্জ জিতেছেন।খেলার পাশাপাশি পড়াশোনায়ও প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন এলিনা। ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন প্রথম শ্রেণি পেয়ে। সব মিলিয়ে এলিনা সুলতানার একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- হাবিবুল কবীর (সম্রাট)

আমাদের দেশে ব্যাডমিন্টন খেলায় মেয়েদের তেমন দেখা যায় না কেনো ?

এলিনা সুলতানা: আমাদের দেশে মেয়েদের ব্যাডমিন্টন খেলায় তেমন বেশি দেখা যায় না  এই কথাটা  কিছুটা সত্য আর কিছুটা ভুল। আসলে এই খেলায় না আসার পিছনে অনেক কারণ আছে। এইটা অনেক এক্সপেন্সিভ গেম। এটার প্রপার ট্রেইনিং করতে প্রতি মাসে অনেক খরচ হয়। যেটা বহন করা অনেক পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না।  

তবে যখন ছেলেরা বা মেয়েরা ভালো পর্যায়ে যায় তখন দেখা যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ,আনসার ভিডিপি যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তারা উনাদের কন্টাক্ট করে নেয়। আমাদের সাটেলের দামই ৩০০ থেকে একটু বেশিই পড়ে যাচ্ছে। এক জনের যদি ৩টা করেও সাটেল লাগে সে ক্ষেত্রে এক জনের ৯০০-১০০০ টাকা পার ডে খরচ হয়। তো সাটেল ছাড়াও স্টিং এর দাম নরমালগুলাও ৫০০-৬০০ আর ভালোগুলা হাজারের বেশি পড়ে যায়৷  সবকিছু মিলিয়ে অনেক এক্সপেন্সিভ হয়ে যায়। এই জন্য আসলে অনেকে আসতে চাইলেও আসতে পারে না।

আমাদের ব্যাডমিন্টন কোথায় কোথায় উন্নতি করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?

এলিনা সুলতানা: ১ম ফেডারেশন এর উচিত হবে যে বিভিন্ন জেলা থেকে স্কুল লেভেলে প্লেয়ারগুলো কালেক্ট করা, প্লেয়ার হান্ট প্রোগ্রাম কন্টিনিউ রাখা এবং ঢাকায় তাদের এনে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং পাশাপাশি পড়াশোনার বিষয়টি দেখতে হবে। কারন শুধু খেলাধুলা করলে তো আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খেলাধুলা দিয়ে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয় না। পাশাপাশি লেখাপড়াও দরকার হয়। খেলাধুলা এবং পড়াশোনা আসলে ২টাই দরকার হয়৷

বিকেএসপির মতো স্কুল সিস্টেম থাকবে। ওইখানে সব স্পোর্টস আছে। ঠিক তেমনি ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন , ব্যাডমিন্টন এর সাথে একাডেমিক লাইন থাকবে তারা সেই লাইনে এগিয়ে যাবে। খেলোয়াড়দের  লং টার্ম একটা ফরেন কোচের আন্ডারে নিয়ে এসে। আমাদর দেশীয় যে ভালো মানের কোচ আছে, সার্টিফাইড কোচ আছে তাদের ইনভলভ করা হলে সে ক্ষেত্রে আমাদের কোচদের মান ডেভেলপ হবে এবং প্লেয়ারদের মানও ডেভেলপ হবে। 

সে ক্ষেত্রে আমাদের ৩মানের কোচ আনতে হবে ব্যসিক, ইন্টারমিডিয়া এবং এডভান্স লেভেল মিনিমাম তিনটা গ্রুপের জন্য তিন মানের কোচ আনতে হবে বাইরে থেকে এবং তিন মানের কোচের সাথে দেখা যাবে ৪-৫ জন যদি দেশীয় কোচ ইনভলভ থাকে সেই ক্ষেত্রে আমাদের কোচ এবং প্লেয়ার ২জনেরই ডেবেলপ করা সম্ভব।  যতো  ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট আছে সিনিয়রদের ক্ষেত্রে এবং জুনিয়রদের ক্ষেত্রে যত বেশি ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরনামেন্ট অংশগ্রহণ করবে তত বেশি র‍্যাংকিংয়ে উপরে উঠে আসবে আবার অংশগ্রহণ না করলে র‍্যাংকিংয়ে নিচে নেমে যাবে। ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরনামেন্ট বেশি বেশি করে পারটিসিপেট করতে হবে এবং ট্যুরনামেন্ট খেলে এসে যে যার মতো বাসাতে আবার চলে যায় সেক্ষেত্রে তাদের ডেভেলপ হবে না। সে ক্ষেত্রে তাদের ঢাকাতে রেখে কন্টিনিউ করতে হবে। আমি তো আগেই বলেছি স্কুল সিস্টেম, কন্টিনিউ পড়াশোনা আর খেলাধুলা ২টা জিনিসই থাকবে।

মেয়েদের ক্ষেত্রে সিকিউরিটির বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

এলিনা সুলতানা: আর মেয়েদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সিকিউরিটির ব্যবস্থা থাকতে হবে যেন তারা সেইফ থাকে। তাদের জন্য এক্সট্রা ফেসিলিটিজ এবং সিকিউরিটির ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। তাহলেই তো দেশের মেয়েরা অবশ্যই ভালো পরিবারের বাবা মা রা মেয়েদের ব্যাডমিন্টন এ দিতে চাইবে। তো সিকিউরিটি না থাকলে ভালো পরিবারের মেয়েদের এলাউ করবে না।

সামাজিক ভাবে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে থাকে আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের অনেক আগে অনেক কষ্ট করে খেলাধুলায় আসতো। বর্তমানে মেয়েদের অনেকে খেলাধুলায় এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। আমি মনে করি যে আমি সে ক্ষেত্রে অনেক লাকি আলহামদুলিল্লাহ আমার পরিবার মানে আমার বাবা মা। আর বিয়ের পরে আমার স্বামী সে নিজেও একজন চ্যম্পিয়ন ছিলেন। সে নিজেও একজন সারটিফাইড কোচ দ্যাটস হুয়াই আমার খেলাধুলা বা পড়াশোনার ব্যাপারে তাদের অবদান বেশি। ১ম পর্যায়ে বাবা মা থাকলেও শেষ পর্যায়ে মা বাবার সাথে স্বামীকেও সফলতার কারিগর হিসেবে ম্যানশন করতে চাই।

আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে?
এলিনা সুলতানা: দেশের অভ্যন্তরে ছেলেদের ভিতরে সুমন ভাই, পরশ ভাই এবং অবশ্যই আমার স্বামী এনায়েত উল্লাহ খান আর মেয়েদের ভিতরে আমি যদিও কখনো সিনিয়র এলিনা আপুকে আমি দেখিনি। কিন্তু আমি তার যে বর্ননা শুনেছি এবং তার পারসোনালিটি আসলেই আমাকে অনেক মুগ্ধ করে। তাই মেয়েদের নাম বললে  আমি এলিনা আপুর নাম টাই নিবো।

আর বিদেশী খেলোয়াড়দের ভিতরে আমার চায়নার লিন ডান,মালয়েশিয়ার লি চং, স্পেনের ক্যারোলিনা ম্যারিন। আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড়। 

ফেডারেশন নিয়ে কি বলবেন? 
এলিনা সুলতানা: বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাডমিন্টনের প্রেক্ষাপট বলতে আমি বুঝাবো ব্যাডমিন্টন এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা এটার অভাব অবশ্যই আছে। বর্তমানে সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। আসলে তারা চেষ্টা করছে কিভাবে ডেভেলপ করা যায়। আমাদের এর ভিতরে অবশ্যই আছে যারা  চাটুকারিতা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যায় আসলে এদের যোগ্যতার চেয়ে ক্ষমতাকে প্রায়োরিটি দেয়া হয়েছে। যেটা হলে অবশ্যই উন্নতি করা সম্ভব না।

তাই আমি চাইবো আমাদের প্রেসিডেন্ট আব্দুল মালেক স্যার যিনি ব্যাডমিন্টনকে অনেক ভালোবাসেন। উনার সাথে যারা যুক্ত আছেন তারাও। স্যার অনেক চেষ্টা করেন। স্যারের সাথে অনেকেই আছেন যারা যোগ্যতা সম্পন্ন। তাই আমি মনে করি কে কোন সেক্টরের যোগ্য তাকে সেই সেক্টরে কাজের সুযোগ করে দিলে বা দায়িত্ব দিলে ব্যাডমিন্টনের আরো উন্নতি হবে। 

আপনার লেখা পড়া কোথা থেকে? 
এলিনা সুলতানা: পড়াশোনা শেষ করেছি ইডেন কলেজ থেকে ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ে  মাস্টারসে ফাস্ট ক্লাস। বিপিএড, এমপিএড উত্তরা ইউনিভার্সিটি থেকে। আলহামদুলিল্লাহ...।

আপনার সন্তানদের খেলায় আনার ইচ্ছে আছে?
এলিনা সুলতানা: খেলায় যদি আসে তাহলে আমার ছেলে আরচারি বা শুটিংয়ে আসবে।

একুশে সংবাদ/এস কে    

খেলাধুলা বিভাগের আরো খবর