সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

চাহিদার চেয়ে এবারও দেশে কোরবানির পশু বেশি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:১৭ পিএম, ১৭ জুন, ২০২৩

এক সময় কোরবানির পশুর হাটে ভারতীয় গরুর আধিক্য দেখা যেত। ভারত বিগত ২০১৪ সালে  বাংলাদেশে গরু প্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায়। এরপর থেকে গ্রাম ও থেকে শহর পর্যায়েও গবাদিপশু লালনপালন করা হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর দেশে কুরবানির পশু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিবছর পশু কুরবানির সংখ্যা ৫-১০ ভাগ হারে বেড়েছে। একপর্যায়ে কুরবানির সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়। তবে করোনাভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিক সংকট দেখা দিলে কুরবানির সংখ্যা কমে যায়। ২০২০ সালে কুরবানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কমে যায়। ২০২১ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯১ লাখ। ২০২২ সালে ৯৯ লাখ ৫৫ হাজারটি পশু কুরবানি দেওয়া হয়।

 

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান  বলেন, ৩-৪ বছরের তুলনায় এবার হাটে আরও বেশি কুরবানির পশু উঠবে। তবে দাম কিছুটা বাড়তি থাকবে। কারণ প্রতিটি পশু খাদ্যের দাম আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। পশু লালন-পালন করতে গিয়ে খরচও বেশি পড়ছে।  দেশে এখন ওষুধ বা তথাকথিত ভিটামিন ট্যাবলেট দিয়ে গরু মোটাতাজা করানো হয় না। প্রাকৃতিক ও অনুমোদিত খাদ্যে পশু পালন করা হচ্ছে। ক্রেতারা এখন যেমন সচেতন খামারিরাও তেমনি সচেতন। প্রাকৃতিক খাদ্যে পশু পালনে লাভ বেশি। ঝুঁকিও থাকে না।

 

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রোর ম্যানেজার মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, তাদের সংগ্রহে ১,৮০০ গরু আছে। বিদেশি ব্রাহামা জাতের গরু সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং দেশি গরু সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি এই গরুর ওজন ১ হাজার কেজির বেশি, উচ্চতা ৭১ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য সাড়ে ৭ ফুট। তিনি বলেন, এবার সাদেক এগ্রোর আকর্ষণ জিদান, পালোয়ান, কমান্ডো, বিএল, গোল্ড কয়েন ও মিস্টার বাংলাদেশ । এর মধ্যে গোল্ড কয়েন ১৫ লাখ এবং মিস্টার বাংলাদেশ ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে।

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশে কুরবানির পশুর কোনো সংকট নেই। বরং উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ বছর কুরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। কুরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কুরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। তিনি জানান, এ বছর কুরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসাবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

 

তিনি বলেন, এ বছর কুরবানির হাটে কোনোভাবে রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে গত বছরের মতো এবারও সারা দেশে পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, অন্যসব বছরের মতো এবারও রেলে কুরবানির গবাদিপশু পরিবহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে রেল বিশেষ সুযোগ দেবে। কম খরচে পশু পরিবহণের সুযোগ করে দেবে। দেশের সর্বত্র যাতে কুরবানির পশু পর্যাপ্ত থাকে সে অনুযায়ী পশু পরিবহণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

 

খামারিরা যাতে পছন্দ অনুযায়ী হাটে কুরবানির পশু বিক্রি করতে পারে এবং জোর করে কেউ পথে পশু নামাতে না পারে সেজন্য খামারিরা চাইলে ৯৯৯-এ যোগাযোগ করতে পারবে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

 

তিনি বলেন, কেউ খামারে পশু বিক্রি করলে তার কাছ থেকে হাসিল আদায় করা যাবে না। কোন খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলেও তাকে হাসিল দিতে হবে না। হাটে আনার পথে কেউ পশু বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল আদায় করতে পারবে না।

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, হাটে যাতে কৃত্রিম সংকট না হয়, সেজন্য হাটে আনার পথে, বাড়িতেও পশু বিক্রি করা যাবে। তবে রাস্তায় হাট বসানো যাবে না। এ ছাড়া ডিজিটাল হাটের মাধ্যমেও পশু বিক্রি করা যাবে।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর