সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

যাঁদের শব্দগন্ধে পথচলা ১৬ বছর

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৮:০৯ এএম, ৬ জুলাই, ২০২১

 সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম, ফয়েজ আহমদ- এর কলাম 'শ্রুতিলিখন' করে। দৈনিক ভোরের কাগজে। তখনো চাকরি হয়নি। ১৯৯৩ সালের শুরুর দিক। তখন ভোরের কাগজ সম্পাদক, মতিউর রহমান। প্রতি লেখা বাবদ পেতাম ১০০ টাকা। ছাপা হতো, মঙ্গলবার ‌। লেখা দিতাম, সোমবার। বিভাগীয় সম্পাদক, আবদুল কাইয়ূম মুকুল ভাই, নিউজ প্রিন্টের স্লিপ প্যাডে লিখে দিতেন। টাকা পেয়ে যেতাম। হিসাব বিভাগ থেকে, টাকা পেতাম নগদে।

এর মাস তিনেক বাদেই, সহ- সম্পাদক হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পল্টন জুয়েল হাউজের দোতলার, সম্পাদকীয় বিভাগের বসার রুমটা ছিল, ভয়ঙ্কর! ডানে- বামে- সামনে যারা বসতেন, তাদের সঙ্গে কথা বলতেই ভয় লাগতো। বামে ছিলেন, আবদুল কাইয়ূম মুকুল ( সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো।) ডানে ছিলেন, ফরিদ কবির ( পরিচালক (মিডিয়া), বারডেম)।

সামনে ছিলেন, আনিসুল হক ( ঔপন্যাসিক, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো) আর সাজ্জাদ শরীফ ( ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, প্রথম আলো)। তাদের মধ্যে, আমার মতোন পুঁচকে জড়সড়ো থাকতাম। এটা ফরিদ কবির ভাই, খেয়াল করেছিলেন। এমনকি, মুকুল ভাইয়ো। মনে আছে, হঠাৎ একদিন মুকুল ভাই বললেন-- -- তোমার কাছে, সিগারেট আছে! থাকলে দ্যাও? ফরিদ ভাই হেসে বললেন, আমারে ও একটা দিও! আমিতো মহানন্দে দিলাম।

তখন, সাজ্জাদ ভাই ( ফরিদ ভাইয়ের ছোট ভাই) বললেন- আনিস, আমরা তাইলে চা খাই! আমি কিছু বলতে যাবো, এমন সময় সঞ্জীব চৌধুরী দাদা এলেন। বললেন, চল বাইরে কাজ আছে! মুকুল ভাই মুচকি হেসে বললেন--- সঞ্জীব, আজ এতো সকালে? সঞ্জীব দা, মুকুল ভাইয়ের উদ্দেশে বললেন-- আমি তো মুকুল ভাই, প্রতিদিন খাই না?

আকাশ যেদিন‌ একটু মেঘলা থাকে, সেদিন আর কি! আর যেদিন রোদ ওঠে, সেদিন! হা হা হা... তখন আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। পরে সাকুরায় গেলাম। জীবনের প্রথম 'বার' দেখলাম! ... অফিস পল্টন থেকে বাংলামটর এলো। শুরু হলো নতুন উদ্যমে কাজ। আমাকে সহ- সম্পাদক করা হয়েছে। বেড়েছে দায়িত্ব। কিন্তু, বেতন মনে হয়, ৩৪০০! দায়িত্বের বাইরে 'মেলা' পাতায় লিখি।

বিভাগীয় সম্পাদক, সঞ্জীব দা। মাসে ১০০০/১২০০ আসে। ঠিক তখনই---- সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম, হুমায়ূন আহমেদসহ অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের ইন্টারভিউ নিতাম। অন্যদিকে, উপসম্পাদকীয় লেখার জন্য তাগাদা দিতাম---- শওকত ওসমান, এ এম এস‌ কিবরিয়া, আবদুল বায়েস, আবেদ খান, ড. ফরাস উদ্দিন, আবুল মাল আবদুল মুহিত, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ডক্টর আনোয়ার হোসেন, পান্না কায়সার, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীসহ নির্ধারিত লেখকদের।

লেখা শেষ হলে, নিজেই চলে যেতাম তাদের বাসায়। এইভাবে ... ভোরের কাগজে ৪ বছর। ১৯৯৭ সালের মার্চে চলে গেলাম, জনকণ্ঠে। জনকন্ঠ পর্ব: জানতাম না, জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান এবং আবেদ খান মামাতো- ফুফাতো ভাই। পরে জানলাম। বিনোদন পাতা 'আনন্দকণ্ঠ' সম্পাদনার দায়িত্ব নেয়ার সময়েই, তোয়াব ভাই বলেছিলেন--- প্রথম পাতায় লিড করবে, সিনিয়র কোনো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের লেখা।

তারপর তোমার খুশি...! কোনো সমস্যা হলো না। ভোরের কাগজে থাকতেই, দেশের অধিকাংশ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম। সেই হিসেবে---- কামাল লোহানী, জুয়েল আইচ, রামেন্দু মজুমদার, আলী যাকের, মামুনুর রশীদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন ফরীদি, সাযযাদ কাদির, অনুপম হায়াৎ, আবুল হায়াত, প্যারিসে‌ পার্থ প্রতিম মজুমদার, আতিকুল হক চৌধুরী, আজাদ রহমান, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, রাইসুল ইসলাম আসাদ , তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম এবং পরে, ভারতের-- মান্না দে, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, সুমন চট্টোপাধ্যায়সহ বেশ কয়েকজনের তালিকা করে ফেলি, ফোন- মেইল- ফ্যাক্সের। এইভাবে কাটিয়ে দেই, প্রায় ১২ বছর। আমার ভালোবাসার জনকণ্ঠে।

দেশ- বিদেশের অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত হয়েছেন। ভোরের কাগজ আর জনকণ্ঠের, অসংখ্য সহকর্মী প্রয়াত হয়েছেন। হচ্ছেন। কবে যে, আমার পালা আসে, তার ঠিক নেই। এমন স্মৃতি মুহূর্তের জন্য হলেও আনন্দের। তবু...!!!

একুশে সংবাদ/জিহা/তাপস 

মতামত বিভাগের আরো খবর