সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সন্মানহানী হচ্ছে মুজিব কোটের! ব্যবহারে প্রয়োজন নির্দেশনা

প্রকাশিত: ০৮:৪০ এএম, ২৭ নভেম্বর, ২০২০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানেই বঙ্গবন্ধু। আর বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যের ধারক বাহক এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল বঙ্গবন্ধুর পরিধানকৃত মুজিব কোট। যে কোটের রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। বাংলার রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কোট পরেই ৬ দফা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ শাসন সবই করেছেন। কিন্তু আজ সেই মুজিব কোটের যত্রতত্র ব্যবহার ও পরিধানের ফলে প্রতিনিয়তই এর সম্মানহানি হচ্ছে। দলের কোন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এ কোট পড়বেন কেন্দ্রীয় কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা এখন গায়ে তুলে নিচ্ছেন ঐতিহাসিক এ কোটটি। এতে করে মুজিব কোট তার আগের জৌলুস হারাচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন সহ বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যানার সর্বস্ব ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাকর্মী, অনুপ্রবেশকারী অনেকে নিজেকে মস্তবড় নেতা হিসেবে জানান দিতে এই কোট পড়ছেন। যা লজ্জাজনক।

এদিকে প্রতিনিয়ত এ কোটের অপব্যবহার হলেও দলের প্রবীণ ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নজরদারি এবং মাথা ব্যথা নেই। এক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দকে সব সময় নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এতে করে সাধারণ জনগণের কাছে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন সহ বঙ্গবন্ধুর পরিহিত এই কোটের অবমাননা হচ্ছে বলে মনে করছেন দলের শুভাকাঙ্খী ও অভিজ্ঞ মহল।

সাধারণ মানুষ মনে করেন মুজিব কোট যুগযুগ ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বহন করছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যারা রাজনীতি করছেন সেসব শীর্ষ নেতারা তখন এই ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করতেন। তারা এ পোশাকটিকে আদর্শ হিসেবে নিয়ে ছিলেন। এক কথায় মুজিব কোট একটি আদর্শ, একটি চেতনা ও একটি গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস। যার ফলে মুজিব কোট ব্যবহারে নীতিমালা ও নির্দেশনা প্রয়োজন। যাতে করে যে কেউ চাইলেই যেন এই কোট ব্যবহার করতে না পারে। দলের কোন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এটি পড়বেন সেটিও আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। সেই সাথে মুজিব কোট এর অবমাননা ও অপব্যবহার রোধে দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ নজর দেওয়া দরকার। কারণ বঙ্গবন্ধু সবকিছুই ইতিহাস ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

আওয়ামী লীগ সহ প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক প্রবীণ নেতৃবৃন্দের অভিমত ব্যক্ত করে এমভয়েস’কে জানান, বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোট’কে ধারণ করা মানে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। এক কোটের অবমাননা হওয়া মানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবমাননা। শহীদদের রক্তের অবমাননা। তাই এ কোটের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে নির্দেশনা প্রয়োজন।

মুজিব কোটের ইতিকথা:

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বিশেষ পোশাক ছিলো সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা আর ৬ বোতামের কালো কোট। যে কোট’টি পরবর্তীতে ‘মুজিব কোট’ নামে বেশি পরিচিতি পায়। শেখ মুজিব এই কোট’টি কবে থেকে পরতে শুরু করেছিলেন তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে বলা হয় যে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তিনি এই কোট’টি পরতে শুরু করেন। তবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মুজিবের আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন যে ১৯৬৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু এই কোট’টি পরতেন।

মাওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক যখন আওয়ামী মুসলীম লীগ করলেন তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মোস্তাক আহমেদ সংগঠনটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে এই কোট পড়তে বেশি দেখা যায়। তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই কোটটির প্রচলন ‘নেহেরু কোট’ থেকে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে। তখন বঙ্গবন্ধু এই মুজিব কোট’টি তার গায়ে জড়িয়ে রেখেছিলেন। ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ৬টি বোতাম রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোটের বোতাম ৬টি কেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, এই ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক।’ আর এ কারণেই একটি আদর্শ মুজিব কোটের প্রতিটিতে বোতামের সংখ্যা থাকে ৬টি। এই পোশাক পরেই বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, সর্বোপরি নিজেকে বাঙালির আইকন হিসেবে বিশ্বের দরবারে হাজির করেছেন।

একুশে সংবাদ/এআরএম

মতামত বিভাগের আরো খবর