সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

দুধর্ষ গুপ্তচর মাতা হারি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:০৫ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

ইউরোপের মক্ষিরানী কিংবা দুধর্ষ গুপ্তচর মাতা হারির গল্পটা হয়তো অনেকেই জানেন। অথবা অনেকে জানেন না! আমার আজকের লেখাটা তাদের জন্য যারা জানেন না। কিংবা যারা জানেন তারাও পড়তে পারেন আমার লেখার সাথে মিলিয়ে নিন। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়াযাক্। 

১৮৭৬ সালের সাত আগস্ট  নেদারল্যান্ডসে মাতা হারির জন্ম ৷ জন্মসূত্রে ওলন্দাজ এই নারী জীবন শুরু করেছিলেন শিশুদের স্কুলের শিক্ষক হবার বাসনা নিয়ে। তখন তার নাম ছিল মার্গারেটা গ্রিইৎজ। স্কুলে পড়া অবস্থাতেই প্রধান শিক্ষকের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এরপর স্কুল থেকে বিতাড়িত হন।

এর কিছুদিন পর প্রেমে জড়ান তাঁর থেকে বিশ বছরের বড় এক ক্যাপ্টেনের সাথে ৷ বিয়ের পর ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার জাভায়।

সে সম্পর্কও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সুখের হয়নি। দুটি সন্তান ছিল ৷ বিষ প্রয়োগে একজন মারা যায়। আরেকজন আলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। কে বিষ দিয়েছিলো সেটাও এক রহস্য। সম্ভবত তার সেই সময়ের কোন প্রেমিক।

এরপর বিচ্ছেদ ৷ এরপর নৃত্যশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। নতুন নাম মাতা হারি। নাচতেন মূলত সেনাবাহিনীর আসরে। প্যারিস থেকে বার্লিন ছিল তার নাচের সুখ্যাতি। সমস্ত ইউরোপেই ছড়িয়ে পড়ে সে সুনাম। তিনি নাচতেন উর্ধাংগে শুধুমাত্র একটি নকশাদার অন্তর্বাস পরে। সমালোকরা বলতো তার নাচের মূদ্রায় শিল্পের পারদর্শিতা ছিলনা ৷ সুডৌল, ক্ষীন স্তন, মেদহীন দেহবল্লরী আর যৌনাবেদনই ছিল তার নাচের মূল আকর্ষণ৷

তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্রীব ছিল সেই সময় ইউরোপের সমস্ত সেনা অফিসার আর বড় বড় পদস্থ কর্মকর্তা৷

সমস্ত ইউরোপ কাঁপিয়ে এই নর্তকী একদিন ধরা পড়ে ফরাসি সৈনিকদের হাতে ৷ বলা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন নর্তকীর বেশে জার্মানির গুপ্তচর।

‘মাতা হারি’ ইন্দোনেশিয়ান শব্দ। এর মানে ভোরের সূর্য।

এক ভোরে ফ্রান্স সরকার তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ফায়ারিং স্কোয়াডে। যখন তাঁকে মৃত্যু মঞ্চে নেওয়া হয় তখন তার পরনে ছিল ফ্যাশনেবল গাউন আর ফেজ টুপি। ফায়ারিং এর আগে কালো কাপড়ে চোখ বাধা হলে তিনি তা করতে দেননি। তার ড্রেসের সাথে ঐ কালো পট্টি বেমানান ছিলো।

তখন তাঁর বয়স ছিল ৪১। সালটা আনুমানিক ১৯১৭। দিনটা ছিল ১৫ অক্টোবর।

মাতাহারি আজো আলোচিত। তার গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে বিশদ জানা যায়না। তাঁর ব্যাপারে সবচেয়ে প্রচলিত তথ্য হল – তিনি জার্মান গুপ্তচর ছিলেন, যেটা একটু আগেই বললাম। ইউরোপিয়ান সেনাবাহিনীগুলোতে অবাধ বিচরণ ছিল তাঁর। সহজেই মিত্রবাহিনীর শীর্ষ সেনাদের সাথে সম্পর্ক গড়তে পেরেছিলেন। সেই সুবাদে করতেন তথ্য পাচার। সহজ ভাষায় তাঁকে ‘ইউরোপের মক্ষিরানী’ বলা যায়। শরীরের বিনিময়ে তিনি সম্পর্ক গড়তেন সরকারের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের সাথে।

কিন্তু, তাঁর যৌনাবেদন, সুন্দর শরীর আর উদ্দাম বাঁধাহীন জীবন যাপন আজো আলোচিত। হলিউডে, ইউরোপে তাঁকে নিয়ে অনেকগুলো সিনেমাও বানানো হয়েছে। সেখানেও সিনেমার মূল পূঁজি মাতাহারির সেক্স আপিল আর রোমাঞ্চকর যৌনজীবন।


একুশে সংবাদ/অ/আ

জানা-অজানা বিভাগের আরো খবর