সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর হাসপাতাল গুলো

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ৬ এপ্রিল, ২০২১

বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। লকডাউনের মধ্যেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা রোজই রেকর্ড সংখ্যক বেড়ে চলেছে। এদিকে পুরো রাজধানীতে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে মাত্র আড়াই হাজার। রোগীদের ভিড় সামলাতে প্রায় হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। গুরুতর অসুস্থ হলেও আইসিইউ সংকটে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে ২২৮ টি আইসিইউ বেড ও বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড থাকলেও ডিমান্ড রয়েছে অতিমাত্রায়। নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকার আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায়। কারণ করোনা আক্রান্ত রোগীদের যদি শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে রোগীর ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হয়।

সূত্র মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ২০টি। আইসিইউ সেবা পাওয়ার আশায় বড় হাসপাতাল ভেবে অনেকেই এখানে ছুটে আসেন কিন্তু খালি পাওয়া যায় না। হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তি রোগীরাই দরকার অনুযায়ী পান না আইসিইউ সেবা।দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়েছে রাজধানী ঢাকায় অনেক কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না -এমন অনেক অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, “জটিল একটা পরিস্থিতি। তার ৭টা/৮টার পর নামাদের রোগী নেয়ার জায়গা থাকে না। আমাদের ২০তা আইসিইউ থেকে যে ২/৪টা খালি হয় সেখানে আমাদের রোগীদের নিতে হয়। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের আইসিইউ চাইলে সেটা দেয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই।”

এদিকে যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে হাসপাতালগুলো সবশেষ কতটা সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, প্রতিদিন পাঁচ হাজার রোগী শনাক্ত হলে সারা ঢাকায়ও রোগীর জায়গা হবে না। এমন অবস্থায় ঢাকায় রোগী আসা কমানোর পাশাপাশি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংখ্যা বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিদিন পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনেক আইসিইউ বেড খালি আছে। কিন্তু বাস্তবে যেসব রোগীর স্বজনরা আইসিইউ পেতে ব্যর্থ হন এবং আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়াই স্বজনের মৃত্যু দেখেন, তাঁদের কাছে সরকারের আইসিইউ ব্যবস্থাপনার সংকট অনেক বড় এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকছে। আর এ জন্য তাঁরা সরকারের ব্যবস্থাপনার ঘাটতিকেই দায়ী করছেন। অনেকে আবার সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে ছোটেন প্রাইভেট হাসপাতালে। যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ বা বাণিজ্যের শিকার হন বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ উঠছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির বিষয়টি বারবার সামনে চলে আসছে। অবশ্য সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেও প্রাইভেট হাসপাতালের খরচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলেছেন।

এছাড়া রাজধানীর দশটি সরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। এসব হাসপাতালে মোট বেড রয়েছে ২ হাজার ৫৫৫টি। আর দশটির মধ্যে আইসিইউ বেড রয়েছে আটটিতে যার মোট সংখ্যা ১২৮টি। যেগুলোর কোনেটিই খালি নেই বেশ কিছুদিন আগে থেকেই।

উল্লেখ্য,দেশে করোনা শনাক্ত আবার বেড়েই চলেছে। এর ফলে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই আশঙ্কার কথা জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন। সংক্রমণ বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও। করোনা রোগীর একটি অংশকে রাখতে হচ্ছে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। ঢাকার বেশির ভাগ করোনা আইসিইউ এখন রোগীতে ভরা। একইভাবে নন-কভিড আইসিইউতেও রোগী কমছে না। ফলে ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না কোনো ধরনের আইসিইউ বেড।


একুশে সংবাদ/ঢা/আ

স্বাস্থ্য বিভাগের আরো খবর